কুলটির স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
‘ফি’ নিয়ে সোমবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার চারটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের জেরে যানজট হয় আসানসোলের একটি স্কুলের সামনে এসবি গড়াই রোডে। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় কুলটির স্কুলে। পরে প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সব স্কুলেই বিক্ষোভ ওঠে।
স্কুলের ‘টিউশন ফি’ বাড়ানোর পাশাপাশি, উন্নয়নমূলক কাজ, ‘স্মার্টক্লাস’, কম্পিউটার, ল্যাবরেটরি, জল ও বিদ্যুতের খরচ জুড়ে দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কুলটির কুলতোড়ার ওই স্কুলের অভিভাবকদের। তাঁরা জানান, গত সপ্তাহে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে এ দিন সকালে তাঁরা স্কুলের গেটে জড়ো হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিভাবকেরা স্কুলের ভিতরে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে ‘ধস্তাধস্তি’ হয়। অভিভাবকেরা এক প্রকার গেট ঠেলেই ভিতরে ঢুকে পড়েন। কয়েকশো অভিভাবক স্কুল পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান। অভিভাবকদের একাংশের ক্ষোভ, ‘‘স্কুল চলছে না। অথচ, কম্পিউটার ল্যাব, স্মার্টক্লাস, জল ও বিদ্যুতের খরচ চেয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমরা এই বর্ধিত টাকা দেব না।’’ বর্ধিত ‘ফি’ না দিলে পড়ুয়াদের স্কুল ছাড়িয়ে নিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের পরামর্শও দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে।
দুপুর ১২টা নাগাদ স্কুল পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান রামবালক শর্মা অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রামবালকবাবু বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের কথা শুনেছি। পড়ুয়াদের স্কুল থেকে ছাড়ানোর অভিযোগ ঠিক নয়। ‘ফি’ বৃদ্ধির বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
আসানসোলের এসবি গড়াই রোড লাগোয়া ওই স্কুলের অভিভাবকদের একাংশের দাবি, ‘‘গত বছরের তুলনায় প্রত্যেক শ্রেণি পিছু ২৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ‘ফি’ বাড়ানো হয়েছে।’’ কিছু অভিভাবক বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে গত দু’মাস ধরে ব্যবসা মন্দা। অর্ধেক বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের। এই অবস্থায় ‘ফি’ বাড়ানো হলে সমস্যা পড়তে হবে আমাদের।’’ তাঁরাও অবিলম্বে বর্ধিত ‘ফি’ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে রাজু সইনি বলেন, ‘‘ফি কিছুটা কমানো হয়েছে। অভিভাবদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন।’’
এ দিন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের জওহরলাল নেহরু রোডের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে জড়ো হন অভিভাবকেরা। পুলিশ এসে অভিভাবকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে স্কুলের ভিতরে যায়। স্কুলের অধ্যক্ষ অনিন্দিতা হোমচৌধুরী বলেন, ‘‘সার্বিক কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। যে সমস্ত অভিভাবকের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা স্কুলে আসুন। সমস্যার কথা জানান। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’’
‘ফি’ নিয়ে দুর্গাপুরের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে। অভিভাবকদের দাবি, ‘লকডাউন’-এ কারও রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারও রোজগারে টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে ভর্তি (রি-অ্যাডমিশন) ‘ফি’ ৫,১৫০ টাকা মকুব করতে বলা হয়েছে। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘‘অনেকেই ফি দিতে পারবেন না। এ বারের বিশেষ পরিস্থিতির কথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে হবে।’’
স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ‘অনলাইন ক্লাস’ চালু রাখা হয়েছে। স্কুলের সব পরিকাঠামো বজায় রাখতে প্রায় আগের মতোই খরচ হচ্ছে। স্কুলের অধ্যক্ষ অনিন্দিতা হোমচৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা ‘কেস টু কেস’ পদক্ষেপ নেব। যাঁদের প্রকৃতই সমস্যা রয়েছে তাঁরা আসুন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এ ছাড়া, স্কুলের পক্ষ থেকে বেশ কিছু বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। অভিভাবকদের অনেকে আবেদন জানিয়েছেন। নিশ্চয় সেগুলি খতিয়ে দেখব এবং তাঁদের পাশে দাঁড়াব।’’ এ দিন রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ‘ফি’ অর্ধেক করা-সহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকেরা। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy