—ফাইল চিত্র
এক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাতটি বাস আটকে রাখার। অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ, ১৩টি বাস আটকে রাখার। এমন টানাপড়েনের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রুটে বেসরকারি বাস চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছেন এই রুটের যাত্রীরা।
‘বাঁকুড়া বাসমালিক কল্যাণ সমিতি’র সহ-সভাপতি অঞ্জন মিত্রের অভিযোগ, সোমবার রাত থেকে দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে বাঁকুড়ার বাস মালিকদের বাসগুলি আটকাতে শুরু করেন সেখানকার এক বাসমালিক ও তাঁর লোকজন। যাত্রীদের নামিয়ে বাসের চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অঞ্জনবাবুর দাবি, “মোট ১৩টি বাস আটকে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বাসকর্মীরা। তাঁরা দুর্গাপুরে বাস নিয়ে যেতে চাইছেন না। সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
অঞ্জনবাবুর অভিযোগের তির যাঁর দিকে, দুর্গাপুরের সেই বাসমালিক সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর আত্মীয় তথা ‘দুর্গাপুর বাসমালিক কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা কিছু অভিযোগ করেছেন। সত্যজিৎবাবু জানান, তিনি জেলাশাসক (বাঁকুড়া) উমাশঙ্কর এস, পুলিশ সুপার (বাঁকুড়া) কোটেশ্বর রাওয়ের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারি রাত ৯টায় বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে ফেরার সময়ে বাঁকুড়া-নবদ্বীপ ভায়া দুর্গাপুর রুটের তাঁর একটি বাস মাচানতলার কাছে আটকান অঞ্জনবাবু, বাদল বিশ্বাস, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বাঁকুড়ার প্রায় ৩০ জন বাসমালিক। অভিযোগ, যাত্রীদের নামিয়ে বাসকর্মীদের বাস নিয়ে ফিরে যেতে বলা হয়। এমনকি, খুন ও বাসে আগুন দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ওই বাসটির কর্মীরা বাস নিয়ে কেরানিবাঁধে ফিরে যান। ২০ জানুয়ারি সকালে বাঁকুড়া-নবদ্বীপ রুটের বাসটি গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যান বাসকর্মীরা। ৯টা ৩৬-এ তা ছাড়ার কথা থাকলেও বাঁকুড়ার ওই বাস মালিকেরা ফের এসে যাত্রীদের নামিয়ে বাসকর্মীদের মারধর করেন এবং বাসের চাবি ছুড়ে ফেলেন বলে সত্যজিৎবাবুর অভিযোগ। এর পরেই ওই বাসটি ও তাঁর পরিবারের আরও ছ’টি বাস বাঁকুড়ায় আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ সত্যজিৎবাবুর।
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অঞ্জনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ওই বাসটির সময়সূচি বাঁকুড়ার অন্য বাসগুলির সময়সূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সমস্যা মেটাতে ওই বাসমালিককে আলোচনায় বসতে বলেছিলাম। কিন্তু তা না করে উনি আমাদের জেলার বাস আটকে রেখেছেন। তার পরে বাঁকুড়ার পরিবহণ কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্গাপুরের বাস মালিকের একটি বাস আটকে রাখেন।’’ যদিও সুভাষবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বাঁকুড়ার কিছু বাসমালিকের রুটের একচেটিয়া দখলদারির চেষ্টার জন্য এই পরিস্থিতি। আমাদের বাসগুলি অন্যায় ভাবে আটকে রাখা হয়। তাই জবাব দিয়েছি।’’ পাশাপাশি, সুভাষবাবুর অভিযোগ, ‘‘২০ জানুয়ারি আমাদের বাসের কর্মীরা বাঁকুড়া থানায় গেলেও কোনও সহযোগিতা পাননি।’’
তবে বিষয়টি নিয়ে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ঘটনাটি নজরে রয়েছে। তবে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি, এমন কথা শুনিনি। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাসও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু এই টানাপড়েনের মাঝে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা। দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়ায় আসা শুভজিৎ ঘোষ, ছাতনা থেকে দুর্গাপুর যাওয়া গোপাল মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘স্ট্যান্ডে এসে শুনি, দুর্গাপুরের বাস চলছে না। চরম সমস্যায় পড়েছি।’’ এই পরিস্থিতিতে সরকারি বাসে দুর্গাপুরে ফিরতে হয় বলে জানান শুভজিৎবাবু। আইএনটিইউসি প্রভাবিত দুর্গাপুরের বড়বাস কর্মীদের সংগঠনের নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাস মালিকদের মধ্যে ঝামেলার জন্য যাত্রী-দুর্ভোগে অনুচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy