রায়নায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির তালিকা থেকে নাম বাদ কেন, সেই প্রশ্ন তুলে কখনও আশা বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে ঘিরে, কখনও পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ চলছে জেলার নানা ব্লকে। এ বার হাতের কাছে তৃণমূল নেতাকে পেয়ে হাতে-পায়ে ধরে কাঁদতে দেখা গেল রায়নার এক বাসিন্দাকে।
বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার দ্বিতীয় পর্যায় ‘আবাস প্লাস’-এর তালিকায় যে প্রকৃত গরিবদের বাদ নিয়ে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলদের নাম তোলা হয়েছে, এটা তার প্রমাণ। সেই কারণেই নেতাকে পেয়ে চোখের জল সামলাতে পারেননি ওই ব্যক্তি। তৃণমূল ব্লক সভাপতি বামদেব মণ্ডল বলেন, ‘‘আবাস প্রকল্পে নাম থাকার পরেও দু’জনের নাম বাদ গিয়েছে। এক জন আমার হাত ধরে কেঁদে ফেলেন। মনে ক্ষোভ থাকলেও ওঁরা আমাদেরই ভরসা করেন। সমস্ত নথি দিয়ে বিডিও-র কাছে ফের আবেদন করতে বলা হয়েছে। দেখা যাক কী করা যায়।’’ মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলের দাবি, ‘‘উপযুক্তদের নামই তালিকায় রয়েছে। তার পরেও কোথাও ফাঁক থাকলে তা মেটানো হচ্ছে।’’
রবিবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকের সেহেরা গ্রামের ধর্মতলায় তৃণমূলের সভা ছিল। সভা শেষে গ্রামের মাঝিপুকুর পাড়ের বাসিন্দা দিলীপ মালিক আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, কেউ সমীক্ষা পর্যন্ত করতে আসেননি। অথচ, পাকা বাড়িগুলি সমীক্ষা করে দেখে গিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। ভরা সভায় এক প্রৌঢ়ের ক্ষোভ দেখে তাঁকে কাছে ডেকে নেন ব্লক সভাপতি। তা দেখে লক্ষ্মণ সাঁতরা নামে আর এক প্রবীণও দাবি করেন, ‘‘লাথি মারলেই আমার মাটির ঘর ভেঙে পড়বে। সেই কবে থেকে রায়নার মতো এলাকায় দল করছি। প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকলেও সরকারি অনুদানে বাড়ি জোটেনি। আমার নাম কেন তালিকায় উঠল না, সে জবাবটাও কি পাব না?’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ জমি ভাগ নিয়ে চাষ করেন। আর বছর পঞ্চান্নর দিলীপ মালিক ভ্যান চালান। দু’জনেরই খড়ের চালের মাটির বাড়ি। দেওয়াল থেকে মাটি ঝরে পড়ছে। সবার সামনে ব্লক সভাপতির কাছে কাঁদতে কাঁদতে দিলীপ বলেন, ‘‘জমি-জায়গা কিছুই নেই। এক ছেলের হৃদরোগের সমস্যা। সব কিছু বেচে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। বাড়ি ভেঙে পড়ছে। তার পরেও কেন আবাস প্রকল্প থেকে সরকারি অনুদানে বাড়ি পাব না, বুঝতে পারছি না!’’ রবিবার তাঁর দাবি, ‘‘ব্লক তৃণমূল সভাপতির কাছে আমার ক্ষোভ জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। সে নিয়ে তৃণমূলের কয়েক জনমজা করেছেন।’’
এই রায়নাতেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, সদস্য বা তাঁদের আত্মীয়দের নাম আবাস প্রকল্পের তালিকায় ছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন বাড়ি নেবেন না জানিয়ে বিডিওকে চিঠি দেন। সে প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের অভিযোগ, ‘‘পাইয়ে দেওয়া রাজনীতিতেও তৃণমূলের অন্দরে ধনীদের প্রভাব বেশি। সে জন্য গরিব মানুষকে আবাস প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সেই ক্ষোভেই প্রকৃত উপভোক্তারা চোখের জল ফেলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy