Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Remal

চার ব্লকে ক্ষতি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বহু এলাকায়

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ৪৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গলসির হিট্টা গ্রামে ভেঙেছে গাছ।

গলসির হিট্টা গ্রামে ভেঙেছে গাছ। ছবি: কাজল মির্জা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৮:৫৯
Share: Save:

রেমাল-রোষে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের চারটি ব্লক। কেতুগ্রাম ১, ২, রায়না ২ ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ৩১টি গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২১৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রবিবার রাত থেকে তার ছিঁড়ে যাওয়া, ট্রান্সফর্মার, সাব-স্টেশন বিকল হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দীর্ঘ সময় বিচ্ছিন্ন ছিল বহু এলাকায়। সোমবার সকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মেমারিতে এক বাবা-ছেলের মৃত্যুও হয়েছে। সোমবারও টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় গোটা জেলা অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিয়েছিল।

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ৪৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচটি বাড়ির সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। ১৩৬ জন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জেলা, ব্লক, পুরসভায় কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন রায়নার মোগলমারি থেকে বাঁকুড়ার ইন্দাসে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। খণ্ডঘোষের তোরকোনার কাছে ঝড়ে রাস্তায় উপড়ে পড়ে একটি বিদ্যুতের খুঁটি। শেষ মূহুর্তে চালক তা দেখতে পান। কিন্তু গাড়িতে নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পেরে পাশের সেচখালে পড়েন। জখমও হন তিনি।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৪.৩ মিলিমিটার। এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ এলাকায় খেতে নামতে পারেননি চাষিরা। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় পূর্বস্থলী১, ২ ব্লকের বেশির ভাগ তাঁত ঘরও বন্ধ ছিল। সমুদ্রগড়ের তাঁতি গোপাল বসাক বলেন “এই আবহাওয়ায় তাঁত বুনতে গেলে যন্ত্রে সুতো আটকে যায়। রোদ ওঠার অপেক্ষায় রয়েছি।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারি অফিস, পঞ্চায়েত, পুরসভাতেও পরিষেবা নেওয়ার ভিড় কম ছিল এ দিন।

কালনা খেয়াঘাটে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ভেসেলে ভাগীরথী পার হয় ট্রাক, গাড়ি। তবে রবিবার সন্ধ্যা থেকেই কালনা খেয়াঘাট বন্ধ ছিল। পরিষেবা বন্ধ থাকায় খেয়াঘাট লাগোয়া এলাকায় বড় বড় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। খেয়াঘাটের তরফে জয়গোপাল ভট্টাচার্য জানান, ভাগীরথীতে বিপজ্জনক ঢেউ এবং দমকা হাওয়া থাকায় ফেরি পরিষেবা বন্ধ ছিল। আবহাওয়ার উন্নতি হলে ফের পরিষেবা চালু করার কথা ভাবা হবে। কাটোয়া-বল্লভপাড়া, শাঁখাই ও মাটিয়ারি ফেরিঘাটও সকালের দিকে কিছু সময় বন্ধ ছিল।

বর্ধমান শহরের বেশির ভাগ এলাকায় দোকানপাট বিকেল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় কিছু দোকান খোলে। নবাবহাট, উল্লাস বাসস্ট্যান্ড, বর্ধমান স্টেশনও ছিল জনশূন্য। টাউন সার্ভিস বাসও কম চলেছে। কালনার চকবাজারে পাইকারি এবং খুচরো হাতে গোনা কয়কেটি দোকান খোলা ছিল। খরিদ্দারদের সংখ্যাও ছিল কম। বেশ কিছু রাস্তায় জল জমে যায়। কালনার ন’নম্বর ওয়ার্ডেও বেশ কিছু বাড়িতে জমা জল ঢুকে পড়ে। এক টোটো চালক মানস ঘোষ বলেন, “সকালে বেরিয়েছিলাম। যাত্রী না মেলায় দুপুরেই ফিরে আসি।’’ গুসকরা ও মেমারি শহরেও দোকানপাট বন্ধ ছিল। যাত্রী প্রতিক্ষালয়গুলিতেও কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি। ওই দু’টি শহরের বাসস্ট্যান্ডেই বেশির ভাগ বাস দাঁড়িয়েছিল। কাটোয়া, দাঁইহাটও ছিল কার্যত জনশূন্য।কাটোয়ার পুরপ্রধান সমীরকুমার সাহা বলেন, “আমাদের কর্মীরা সচেতন রয়েছেন। কোথাও বড় ধরনের সমস্যা হয়নি। সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া ছিল।’’

ভাতার ও মন্তেশ্বরেও রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। যানবাহন ছিল কম। গলসিতে রবিবার রাতে ঝোড়ো হাওয়া দিলেও বৃষ্টি পড়েনি। সোমবার সকালই শুধু বৃষ্টি হয়। তবে জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হয়েছে। কালনা ২ ব্লকের সাতগেছিয়া থেকে ভাতারের কুলচণ্ডা, বানেশ্বরপুরে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। কাটোয়া শহরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, রেমাল-ঝড়ে অন্তত ৪০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছে। দেড়শোটির মতো ফিডারের তার ছিঁড়েছে, ১৪টি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে। এ ছাড়াও সাতটি সাব-স্টেশন বসে গিয়েছিল। দফতরের আঞ্চলিক ম্যানেজার (বর্ধমান) গৌতম দত্ত বলেন, “ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Power Outage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy