হাতে আর দু’দিন।
১৭টি পঞ্চায়েত ঘুরে মিটিং-মিছিল সেরে ফেলতে হবে তার মধ্যে। রয়েছে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট চাওয়া।
এ কাজের জন্য প্রয়োজনের তালিকাও বেশ লম্বা—পতাকা, ফেস্টুন, মাইক, গাড়ি, কর্মীদের অন্তত দু’বারের খাওয়া-দাওয়া। কিন্তু প্রয়োজন মেটাতে যেটার দরকার, সেটারই অভাব দেশ জুড়ে।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাঁচশো, হাজার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতেই মাথায় হাত পড়েছিল দেশসুদ্ধু লোকের। বিশেষত, রাজ্যের যে যে এলাকায় সামনেই উপনির্বাচন সেখানে একেবারে ত্রাহি ত্রাহি রব। কমবেশি সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই দাবি, যত দিন যাচ্ছে ততই জমা টাকা ফুরিয়ে সঙ্কট টের পাচ্ছেন তাঁরা। বিশেষত, প্রত্যেক দিনের যে খরচা তা মেটাতে নগদের অভাব বড়ই বাজছে।
তৃণমূল শিবির যেমন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের তত্ত্বাবধানে ১৭টি পঞ্চায়েতের দায়িত্বে সাত বিধায়ক, জেলা স্তরের নেতাদের রেখেছে। তাঁদের নীচে রয়েছেন পঞ্চায়েত স্তর ও বুথ কমিটির নেতারা। আর একেবারে প্রাথমিক ধাপে রয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মী, গ্রামীণ ডাক্তারেরা। প্রচারের লোকের তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনি তাঁদের খরচও। নেতাদের দাবি, কাজ উতরোতে নিজের পকেট থেকেই অনেক খরচ করা হচ্ছে। হাত বাড়িয়েছেন দলের কর্মীরাও। তবে তাতেও নোটের সঙ্কট কাটছে না বলে তাঁদের দাবি।
জানা গিয়েছে, প্রতিদিনই অন্তত দুটি সভা করা হচ্ছে পঞ্চায়েতগুলিতে। তাতে মাইক ভাড়া লাগছে হাজার দুয়েক। রয়েছে নেতা-কর্মীদের চা, টিফিনের খরচ পিছু আরও হাজার খানেক টাকা। প্রচারে প্রতিদিনই পালা করে আসছেন কোনও না কোনও রাজ্য স্তরের নেতা। কেউ সভা করছেন, কেউ বা হুড খোলা জিপে চেপে শহরে ঘুরছেন। সেই প্রচারের গাড়ির খরচার সঙ্গে রয়েছে সভার পতাকা, ফেস্টুন, মঞ্চ, মাইক, রাতে হলে আলো, জল, চা, টিফিনের খরচা। কোনও কোনও জায়গায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসার জন্য বাস-ট্রাক্টরের খরচাও দিতে হচ্ছে দলকে। তাতেও লেগে যাচ্ছে দশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রচারে বেরোনো লোকশিল্পীদেরও সাম্মানিক দিতে হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, শিল্পীদের টিফিন, দুপুরের খাওয়া এবং সমস্ত কর্মসূচি মিলে খরচ সহ প্রায় হাজার দশেক টাকা। আবার প্রার্থীর সমর্থনে গ্রামে গ্রামে ফ্লেক্স, ফেস্টুনে মোড়া যে প্রচার-গাড়ি ঘুরছে তার পিছনেও টানা খরচা রয়েছে হাজার পাঁচেক। এ ছাড়াও জনবহুল এলাকা, বাজারে মাইক ফুঁকে অসংখ্য পথসভা চলছে। প্রতি সভাতে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার খরচ হচ্ছে বলেও তৃণমূল নেতাদের দাবি। আর বড় মিছিলের খরচা তো হাজার দশেক।
স্বাভাবিক ভাবেই পাঁচশো, হাজার ছাড়া এত টাকা দিতে বিপাকে পড়েছেন নেতারা। তার উপর ব্যাঙ্ক থেকে প্রতিদিন যে দু’হাজার টাকা মিলছে তা চোখে দেখার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেও নেতাদের দাবি। তাহলে কীভাবে চলছে প্রচার? মন্তেশ্বর ব্লকের ভাগড়ামূল পঞ্চায়েতের দায়িত্বে থাকা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘প্রচারে যাওয়ার জন্য আমার গাড়ির তেল আমি নিজেই ভরি। আর কর্মীদের চা, তেলেভাজার খরচটুকুও নিজেই দিয়ে দিই। এ ছাড়া বুথে প্রচারের জন্য মাইকের খরচ কর্মী সমর্থকেরাই দিচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, বড় সভা বা কর্মসূচি হলে দল টাকা জোগাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পঞ্চাশ-একশো নোটের যা হাল তাতে শেষ দু’দিন কীভাবে চলবে কে জানে। আর এক নেতারও দাবি, প্রত্যেক কর্মীকেই সাহায্য করার কথা বলা হচ্ছে। ব্যাঙ্কে গিয়ে খুচরো জোগাড় করার কথা বলা হচ্ছে। যেটুকু হয়!
জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘খুব বড় সমস্যা। লোকশিল্পীদের হোটেলে পুরনো পাঁচশো, হাজার টাকা ভাঙিয়ে খাওয়ানো যাচ্ছে না। যাঁরা ভরসা করে ধারে দিচ্ছেন, সেখানেই যাচ্ছি।’’
একই দশা সিপিএম, কংগ্রেসেরও। সিপিএম প্রার্থী ওসমান গনি সরকারের দাবি, ‘‘পুরনো পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বেশির ভাগ জায়গাতেই চলছে না। ফলে প্রচারের গাড়ির তেল এমনকী, কর্মীদের এক কাপ চাও অনেক সময় খাওয়াতে পারছি না।’’ কংগ্রেস প্রার্থী বুলবুল আহমেদ শেখও জানান, কর্মীদের বাড়ি থেকে টুকটাক খাবার নিয়ে বেরোতে বলা হচ্ছে। তাছাড়া যার যার নিজের পকেটই ভরসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy