সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
এক স্কুল শিক্ষকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গলসিতে। গলসির চান্না অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইন-চার্জ) সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৪০) দেহ শুক্রবার বিকেলে শিল্ল্যার বীরিংপুর এলাকায় দামোদর থেকে উদ্ধার হয়। তাঁর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা থানার গোপালপুরে। তবে তিনি স্ত্রী, মা এবং ছেলেকে নিয়ে থাকতেন দুর্গাপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে।
ময়না-তদন্তের জন্য শনিবার তাঁর দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নদে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তবে নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃতের পরিবারের ধারণা, ঘটনার পিছনে ‘অন্য কিছু’ থাকতে পারে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে মোটরবাইকে চড়ে বেরিয়েছিলেন সৌরভবাবু। সঙ্গে ছিল একটি ব্যাগ। বাড়ির সকলকে বলেছিলেন তিনি স্কুলে যাচ্ছেন। বুদবুদ থানার পুলিশ ওই দিন সন্ধ্যায় রণডিহাতে দামোদরের বাঁধ থেকে মোটরবাইক এবং শিক্ষকের ব্যাগটি উদ্ধার করে। কিন্তু তখনও সৌরভবাবুর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় লোকজনের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষকের উদ্ধার করে দেহ।
সৌরভবাবুর পারিবারিক সম্পত্তির পরিমাণ অনেক বলে জানিয়েছে পুলিশ। রয়েছে বিশাল বাড়িও। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষক গ্রামের বহু মানুষের কাছে টাকা ধার করেছিলেন। দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। জমি বিক্রি করে ঋণের কিছুটা শোধ করেছিলেন। পাওনাদাররা টাকা আদায়ে তাঁর উপরে চাপ তৈরি করছিলেন। অনেকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাগাদাও দিতেন।
সৌরভবাবুর স্ত্রী পাপিয়াদেবী বলেন, ‘‘ওঁর বেশ কিছু টাকা দেনা ছিল। কিন্তু তার পরিমাণ আমার জানা নেই। কেন দেনা করেছিলেন, তা-ও জানি না। তবে দেনার জেরে উনি আত্মঘাতী হবেন বলে মনে হয় না। ওঁর কথাবার্তা বা ব্যবহারে কোনও উদ্বেগও লক্ষ্য করিনি। তাই এর পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে।’’ তিনি জানান, ছেলেকে ভাল স্কুলে পড়াবেন বলে তাঁরা সপরিবারে কাঁকসা থেকে দুর্গাপুরে চলে আসেন। এর সঙ্গে তাঁর স্বামীর ঋণের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি পাপিয়াদেবীর। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পরে কথা বলার অবস্থায় নেই তাঁর মা।
করোনার জেরে স্কুল বন্ধ থাকায় শুধু মিড-ডে মিলের চাল বিলির দিন স্কুলে যেতেন সৌরভবাবু। বৃহস্পতিবার কেন তিনি রণডিহা গিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয় তাঁর পরিবারের কাছে। কেউ তাঁকে ওই জায়গায় যেতে বলেছিলেন কিনা, সে প্রশ্নও উঁকি দিচ্ছে তাঁদের মনে। সৌরভবাবুর ভায়রাভাই নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সৌরভদের সংসার খুবই ছোট। সেখানে কোনও সমস্যা ছিল বলে জানা নেই। উনি আত্মহত্যা করেছেন, তা ভাবতেই পারছি না। মৃত্যুর পিছনে অন্য কারণও থাকতে পারে।”
পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, সৌরভবাবুর বাবাও স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর পরে শিক্ষকতার চাকরি পান সৌরভবাবু। প্রথমে সহ-শিক্ষক হিসেবে গলসি বৃন্দাবনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে চান্না অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘টিচার ইন-চার্জ’-এর দায়িত্ব পান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy