এর জেরে বারবার দুর্ঘটনার অভিযোগ উঠছে। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস
রাস্তার পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক, ডাম্পার। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের নানা জায়গায় এটা পরিচিত দৃশ্য। তার জেরে দুর্ঘটনাও ঘটে একের পরে এক। দুর্ঘটনা রোধে রাস্তার পাশে রাখা গাড়ির চাকা কালো পিচে থাকলেই জরিমানা করা শুরু করেছে পুলিশ। পুজোর সময়ে এক্সপ্রেসওয়েতে একটা বড় সময়ের জন্য নো-এন্ট্রি থাকলেও শুধু বর্ধমানেই প্রায় সাড়ে তিনশো গাড়ির কাছে ওই কারণে জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ জানিয়েছে।
কিছু দিন আগে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে গাড়ি ধাক্কা দেওয়ায় মৃত্যু হয় কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়-সহ তিন জনের। ওই ঘটনার পরে, এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। এর আগে সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ এই রাস্তায় দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িও এই রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ৪৪৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে ১১৯ জনের। এর মধ্যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে দুর্ঘটনার হার বেশি। এ বার ষষ্ঠী থেকে একাদশীর মধ্যে বর্ধমান সদর এলাকায় ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দশটি। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনা এড়াতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় রাস্তার ৭২ কিলোমিটার অংশে ফাগুপুর, শক্তিগড় ও জামালপুর— মাত্র তিনটি এলাকায় দু’দিক মিলিয়ে ছ’টি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। ছোট জায়গা হওয়ায় এক-একটি পার্কিংয়ে ৩০-৩৫টির বেশি ট্রাক দাঁড়াতে পারে না। পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই পার্কিংয়ের জায়গাগুলিতে চালক-খালাসিদের জন্য ন্যূনতম সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তাই তাঁরা ধাবা ও শৌচাগারের সুবিধা যেখানে পান, সেখানেই গাড়ি রাখেন। জেলা পুলিশের তরফে ওই রাস্তায় অন্তত দু’টি বড় পার্কিং ও ছোট ১০টি পার্কিংয়ের জায়গার কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, রাস্তার জন্যে মোটা টাকা টোল আদায় করা হলেও যাত্রী-নিরাপত্তার দিকে তেমন নজর দেওয়া হয় না। নির্দিষ্ট দূরত্বে ব্রেক-ভ্যান, অ্যাম্বুল্যান্স রাখার ব্যবস্থা হয় না। মেমারিতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পানাগড় থেকে ব্রেক-ভ্যান আনার ঘটনা হামেশাই ঘটে। এ ছাড়া, গোটা রাস্তায় দিকনির্দেশ, সিগন্যাল ব্যবস্থা, ছোট রাস্তার মোড়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বারবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
এই পরিস্থিতিতে জেলা পুলিশের হাইওয়ে ডিভিশন নজরদারি শুরু করেছে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির চাকা রাস্তার পিচে উঠবে না। রাতে কোনও প্রয়োজনে জাতীয় সড়কের ধারে গাড়ি রাখতে হলে পিছনের ও পাশের আলো জ্বালিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। তাতে পিছনের গাড়ির চালকেরা বুঝতে পারবেন, গাড়িটি কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ও তার বিস্তৃতি কতটা। আমাদের অভিযান চলছে।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পথ নিরাপত্তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও হয়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প আধিকারিক স্বপনকুমার মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘রাস্তা তৈরির সময়ে যে পরিমাণ গাড়ি চলত, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি গাড়ি এখন চলাচল করে। সে জন্য রাস্তা ছ’লেন করার পরিকল্পনার সঙ্গে ডানকুনি থেকে পানাগড় পর্যন্ত ১৯টি ট্রাক দাঁড়ানোর জায়গা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy