পাটশ্যাওড়া গ্রামে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশিতে গেলে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে। পুলিশের সিআই, ওসি এবং এক জন এএসআই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার পাটশ্যাওড়া গ্রামে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি হামলা চালিয়েছে। যদিও বিজেপি তা অস্বীকার করেছে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশের বড় বাহিনী নিয়ে গ্রামে যান ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী। গ্রামবাসীরা পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ মানতে চাননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তির ঘটনা ঘটছে লাউদোহায়। ১২ জুন ধবনি গ্রামে বিজেপির বিজয় মিছিলে লাঠি, বাঁশ নিয়ে হামলা ও এক বিজেপি কর্মীকে তাক করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল পাল্টা দাবি করে, বিজেপি আগে হামলা চালানোয় দলের কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিরোধ করেন। পুলিশ কমিশনার ডিপি সিংহের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ তল্লাশিতে গিয়ে দু’জনকে ধরে। সেই সময়ে কিছু গ্রামবাসী অন্ধকারে পুলিশের উপরে লাঠি, রড নিয়ে হামলা করে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
ওই গোলমালের তদন্তে নেমে পুলিশ গত কয়েক দিনে বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে রাতবিরেতে অভিযান চালায়। পুলিশের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে রবিবার থানা ঘেরাও করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ যদিও জানায়, নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। দলের জেলা সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি দাবি করেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে দিনই জব্বরপল্লিতে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজনকে কাজ দেওয়ার নামে সিন্ডিকেট করে টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলে একটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। তৃণমূল যদিও অভিযোগ মানেনি।
সোমবার রাতে পুলিশ পাটশ্যাওড়া গ্রামে যায়। গ্রামবাসীর অনেকের অভিযোগ, রাত ১টা নাগাদ স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ অভিযানে আসে। বিজেপি কর্মী দুই ভাই চিরঞ্জিৎ বাউড়ি ও অজয় বাউড়িকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরে পুলিশ গ্রামের অন্য বাড়িতে অভিযানে গেলে বাধার মুখে পড়ে। জখম হন সিআই অমিতাভ সেন, ওসি অনির্বাণ বসু এবং এএসআই বুদ্ধদেব গায়েন। তিন জনকেই দুর্গাপুরের গাঁধী মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার জয়দীপ ভাদুড়ি জানান, অমিতাভবাবু মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি দু’জনের চোট তেমন গুরুতর নয়।
ব্লক তৃণমূল নেতা সুজিত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ওই গ্রামে ভোটের পর থেকেই বিজেপি সন্ত্রাস চালাচ্ছে। রবিবার সকালে এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করা হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গত রাতে পুলিশের উপরে হামলা চালিয়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আমরা চাই, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিক।’’ স্থানীয় বিজেপি কর্মী উৎপল গড়াই অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পুলিশের উপরে আমরা হামলা করিনি। তৃণমূলের লোকজন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের সমর্থকদের বাড়িতে ঢোকে। ওসি লাঠি চালাতে বলেন। আমরা দৌড়ে পালাই। তখন হয়তো পাথরে লেগে পড়ে গিয়ে চোট লেগেছে পুলিশের।’’
পাড়ার মহিলাদের দাবি, মাঝরাতে সবাই ঘুমোচ্ছিলেন। পুলিশের উপরে কেউ হামলা চালাননি। পূর্ণিমা বাউড়ির অভিযোগ, ‘‘স্বামী, দেওর ঘরে ঘুমোচ্ছিল। পুলিশ দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলে, না বেরোলে দরজা ভাঙবে। এর পরে দু’জনকে তুলে নিয়ে চলে যায়।’’ তাঁরা বিজেপি কর্মী জানিয়ে পূর্ণিমাদেবীর অভিযোগ, ‘‘কিছু দিন আগে তৃণমূলের লোকজন আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। পুলিশ কিছু করেনি। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’
বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘পুলিশের জখম হওয়ার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু পুলিশের বড় বাহিনী রাতে গ্রামে গিয়ে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে। মহিলাদের সঙ্গেও অশালীন ব্যবহার করা হয়েছে। তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে পুলিশের উপরে হামলা চালিয়ে আমাদের উপরে দোষ চাপাচ্ছে।’’
বিজেপি নেতা-কর্মীদের আরও অভিযোগ, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরব হওয়াতেই তৃণমূল পুলিশকে নিয়ে বদলা নিতে এসেছে। দলের কর্মী উৎপলবাবুর দাবি, ‘‘সিন্ডিকেট বন্ধ করতেই হবে বলে পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ কিছু না করায় আমরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। আবার সেই তালা খুলে দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূল নেতা সুজিতবাবু বলেন, ‘‘দলের কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইট, বালি সরবরাহ করে। কোনও অনৈতিক কাজ হয় না সেখানে। বিজেপি তা দখল করতে চাইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy