Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Khandaghosh

বেহাল রাস্তার কারণেই বালির ট্রাক বেসামাল

খণ্ডঘোষের পলেমপুর থেকে সালুন পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তাটি কার্যত মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে।

পলেমপুর থেকে সালুন পর্যন্ত রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র

পলেমপুর থেকে সালুন পর্যন্ত রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৩
Share: Save:

বাড়তি বালি নিয়ে খণ্ডঘোষের বিভিন্ন খাদান থেকে বার হয় ট্রাকগুলি, জরিমানার হার থেকেই তা স্পষ্ট। তবে শনিবার রাতের দুর্ঘটনার পিছনে বাড়তি বালি বোঝাইয়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। বরং বেহাল রাস্তার জন্যই বালির ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল, দাবি তাঁদের।

খণ্ডঘোষের পলেমপুর থেকে সালুন পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তাটি কার্যত মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে। ওই রাস্তার উপরে কামালপুরে শনিবার গভীর রাতে একটি বালিবোঝাই ১৬ চাকার ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। বালির চাপে রাস্তার ধারে থাকা একটি বাড়ির পাঁচিল ও ঘরের দেওয়াল ভাঙে। ঘুমের মাঝে প্রাণ হারান শেখ সদরুল (৪৩)। জখম হন তাঁর স্ত্রী আফিয়া বেগম ও ভাই শেখ তজরুল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, একে ভাঙা রাস্তা তার উপরে প্রতিদিন বাড়তি বালি বোঝাই করে ছুটছে ট্রাকগুলি।

প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, শনিবার রাতে দুর্ঘটনায় পড়া ট্রাকটিতে অতিরিক্ত বালি ছিল না। তবে তাঁদের দেওয়া তথ্য বলছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অমূলক নয়। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ২০২২ সালে খণ্ডঘোষ থানা ২৫৩টি বাড়তি বালিবোঝাই ট্রাক আটক করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, পরিবহণ দফতরের হাতে তুলে দেয়। সেখানে এ বছর শুধুমাত্র জানুয়ারিতেই ১২৪টি ট্রাক আটক করা হয়েছে। ২০২২ সালে জরিমানা বাবদ আদায় হয়েছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাড়তি বালি নিয়ে যাতায়াতের প্রবণতা রয়েছে ট্রাকগুলির। ক্রমাগত অভিযানে জরিমানা আদায় বাবদ রাজস্ব বাড়ছে। তবে বড় ট্রাকগুলি সাধারণত বাড়তি বালি নেয় না।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি ভেঙে ঢুকে পড়া বালির স্তুপ সরানোর কাজ চলছে। দুর্ঘটনাস্থলের জায়গা এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরো রাস্তাটাই খানাখন্দে ভরা। উঁচুনিচু রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। পুরো রাস্তার উপরে ১০-১২টি বালির খাদান রয়েছে। বেশ কয়েকটি ইটভাটাও রয়েছে। প্রতিদিন ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক, ট্রাক্টর মিলিয়ে শ’দেড়েক গাড়ি যাতায়াত করে, দাবি তাঁদের। স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল ইসলাম, জাকির হোসেনদের দাবি, ‘‘২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় রাস্তাটি তৈরি হয়। ২০১০ সালে রাস্তার ধার ধরে দামোদরে বালি খাদান খুলতে থাকে। রাস্তার হালও খারাপ হতে থাকে। প্রশাসনের সব স্তরে জানানোর পরেও হাল ফেরেনি রাস্তার।’’

দেখা যায়, রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গা বসে গিয়েছে। পিচের আস্তরণ উঠে মাটির রাস্তা হয়ে গিয়েছে। বালি বোঝাই গাড়ি থেকে জল পড়ায় পিচ্ছিল হয়েছে রাস্তা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই রাস্তা দিয়ে ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। নানা কাজে প্রতিদিন দেড়-দু’হাজার লোকের আসাযাওয়া থাকে। ২০১৭ সাল থেকে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন চালাচ্ছেন তাঁরা। সংস্কারের দাবিতে রাস্তার একাংশ বেশ কয়েকবার কেটে দেওয়াও হয়। স্থানীয় কাঞ্চন সেনের দাবি, ‘‘বহু বার আন্দোলন করেছি। কিছুই হয়নি। এটাই ভবিতব্য বলে মেনে নিতে হয়েছে।’’

বিডিও (খণ্ডঘোষ) সত্যজিৎ কুমারের দাবি, ‘‘ওই রাস্তাটি রাজ্য সড়ক উন্নয়ন সংস্থার (এসআরডিএ) অধীনে। মানুষজনের যাতায়াত করার জন্য স্থানীয় ভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। এসআরডিএ কয়েক কোটি টাকার পরিকল্পনা নিয়েছে। তা অনুমোদিত হয়নি এখনও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Khandaghosh Poor condition of road Truck accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy