নিজস্ব চিত্র
ভক্তি আছে। বাসনা আছে। কিন্তু পূরণ করার পথ নেই। তিনি বাস্তবের জগন্নাথ। জগন্নাথ বাউড়ি। জন্ম থেকে তাঁর দু’টি হাত নেই। তাই মনে ভক্তি থাকলেও রথের দিন রশি টানা সম্ভব হয় না তাঁর। প্রতি বছর এই একটা দিন বড় কষ্টে থাকেন বিশেষ ভাবে সক্ষম জগন্নাথ।
কিংবদন্তি বলে, বিশ্বকর্মা জগন্নাথের মূ্র্তি তৈরির সময় পুরীর রাজাকে শর্ত দিয়েছিলেন, ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি মূর্তি তৈরি করবেন। আর যত ক্ষণ না কাজ শেষ হচ্ছে, তত ক্ষণ সেই দরজা না খোলা যাবে না। পুরীর রাজা সেই নিয়ম ভেঙে দরজা খুললেন যখন, তখন জগন্নাথের শরীরটুকুই তৈরি হয়েছে, হাত পা নয়। বিশ্বকর্মা তাই আর সম্পূর্ণ করেননি জগন্নাথের মূর্তি। বাস্তবের জগন্নাথকে গড়তে গিয়েও যেন বিধাতা এমনই এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
পুর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের বেরেন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলুটি গ্রামে বাড়ি জগন্নাথ বাউড়ির। তিনি বাড়ির বড় ছেলে। তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম বলরাম। জগন্নাথের জন্ম থেকেই দু’টি হাত নেই। তিনি জানান, ‘‘তখন থেকেই গ্রামের লোকজন আমাকে প্রভু জগন্নাথ দেবের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। এমনকি বাবা লক্ষ্মণচন্দ্র ও মা সুমিত্রাও মনে করতেন, প্রভু জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদে এক দিন আমি নিজের পায়ে দাঁড়াব। তার স্কুলের মাস্টারমশাইয়ের পরামর্শে বাবা আমার নাম রাখেন 'জগন্নাথ'। সেই থেকে জগন্নাথ বাউড়ি নামেই আমার পরিচিতি।’’ ওই নামেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় তাঁর লেখাপড়া।
এক সময়ে জগন্নাথের বাবা ও মা ক্ষেতমজুরের কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। জগন্নাথ জানান, পায়ে পেন্সিল গুঁজে দিয়ে তাঁকে বাংলা ও ইংরেজি অক্ষর লেখা শিখিয়েছিলেন বেলুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পাল। পায়ে লেখা শিখতে পারার পরেই তাঁর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এর পর থেকে শত কষ্টের মধ্যেও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি 'বেসিক ট্রেনিং’ কোর্সে ভর্তি হন। ট্রেনিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পান। প্রায় ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি আউশগ্রামের জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। জগন্নাথ বলেন, ‘‘পায়ের আঙুলে চক গুঁজে নিয়ে পায়ে করেই বোর্ডে লিখে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়া বোঝাই। তা নিয়ে অবিভাবক বা পড়ুয়া, কেউ কোনও দিন আপত্তি তোলেননি। বরং তাঁরা আমার পড়ানোটাকেই মান্যতা দিয়েছেন।’’
স্ত্রী লক্ষী, বাবা, মা, ভাই, বোন সকলকে নিয়ে এখন জগন্নাথের ভরা সংসার। এই বাউড়ি পরিবার রথযাত্রা উৎসবের দিনটি ভক্তিভরে পালন করেন। কিন্তু জগন্নাথের আক্ষেপ, হাত নেই বলে তিনি রথের দড়ি টানতে পারেন না। এই বিষয়টি তাঁকে বড়ই ব্যাথিত করে। ‘‘এ জীবনে আর সেই সাধ পূরণ হবে না,’’ বললেন জগন্নাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy