বাসন্তী হাজরা।
গ্রামে মনসা পুজো রয়েছে। তাই স্কুলে যেতে চাইছিল না বোন। জোর করে তাকে স্কুলে না পাঠালে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হত না, বিলাপ করছিল বছর ষোলোর স্বর্গ হাজরা। মঙ্গলবার মেমারির রাধাকান্তপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বাসন্তী হাজরার মৃত্যুর খবর শোনার পরে দিদি স্বর্গ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলছিল, ‘‘আমিই জোর করে পাঠালাম স্কুলে। তার পরে এই রকম খবর এল।’’
মেমারির কামালপুরের বাসন্তীর সঙ্গে রাধাকান্তপুরের স্কুলে যাচ্ছিল ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, নবম শ্রেণির ছাত্রী পায়েল সর্দার ও তার ভাই অর্জুন সর্দার। দু’জনই গুরুতর জখম হয়েছে। অর্জুনকে কলকাতার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পায়েল বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনার পরেই উৎসবের আমেজ ফিকে গ্রামে।
তিন-চারটি গ্রাম মিলে মেমারি-মন্তেশ্বর রাস্তার ধারে বুধবার মনসা পুজো করার কথা। এই পুজো ঘিরে গ্রামগুলিতে উৎসবের রীতি রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনার পরে উৎসব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাসিন্দা তারকনাথ ঘোষ, বিকাশ হাজরারা জানান, ‘সয়লা’ (মনসা পুজো) উপলক্ষে গান-বাজনা থেকে পঙ্ক্তিভোজ, সব বাতিল করা হয়েছে।
মাটির দেওয়াল, অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ঘরে মা-বাবা-দাদা-ঠাকুমার সঙ্গে থাকত বাসন্তী। মা মিতাদেবী ও বাবা দেবুবাবু সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মন্তেশ্বর-কালনা এলাকার জমিতে কাজে চলে যান। ঠাকুমা সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৬টার সময়ে উঠে পড়াশোনা সেরে পুকুরে দু’বালতি জামা-কাপড় ধুতে গিয়েছিল। তার পরে বাড়ি ফিরে পান্তাভাত, আলুভাজা খেয়ে স্কুলে বেরোয়। তার কিছুক্ষণ পরেই খারাপ খবর আসে!’’ দিদি স্বর্গ বলে, ‘‘আমি বেশি দূর পড়া করিনি। বোনের পড়ার ইচ্ছা ছিল। কোনও দিন স্কুলে ফাঁকি দিত না। উৎসবের জন্য স্কুলে যাব না বলছিল। আমিই স্কুলে পাঠিয়েছিলাম।’’
বাসন্তীদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পায়েল-অর্জুনের বাড়ি। তাদের বাবা-মা সকালে জমিতে কাজে বেরিয়ে যান। দুই পড়ুয়ার মামিমা সীমা সেন, লক্ষ্মী সেনরা জানান, ভোরে পায়েলের মা মঞ্জুলাদেবী রান্না করে যান। পায়েল পড়াশোনা শেষে বাড়ির কাজ সেরে ভাইকে নিয়ে সাইকেলে স্কুলে যায়। রাধাকান্তপুর স্কুলের শিক্ষিকা জয়শ্রী ঘোষ বলেন, ‘‘তিন জনই নিয়মিত স্কুলে আসত।’’
এ দিন দুর্ঘটনার পরে দেবপুর, গন্ধর্বপুর, কামালপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অভিভাবকেরা আতঙ্কিত। তাঁদের কথায়, ‘‘এর পরে বাড়ির ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগবে।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ মহান্তর কথায়, ‘‘যান নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হলে পড়ুয়া থেকে অভিভাবক, সবাই ভয় পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy