দূষণ: এসটিকেকে রোডের ধারে বৈদ্যপুর মোড়ে নালায় জমে জঞ্জাল। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
শহর প্রাচীন। পুরনো পরিকাঠামোও। সরু রাস্তার ধারে খোলা নালা, মজা পুকুর। তার সঙ্গে ড্রেনের মুখ আটকে রাশি-রাশি প্লাস্টিকে দম কার্যত আটকাতে বসেছে দেড়শো বছরের পুরনো কালনা পুরসভার।
বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের ক্ষোভ, সাফাই হয় ঠিকই, কিন্তু এখনও বহু ওয়ার্ডেই সারা বছরই থাকে বর্ষাকাল। জমা জল, নোংরায় রোগ, দূষণে ভোগেন তাঁরাও।
যদিও পুরসভার দাবি, এর জন্য দায়ী প্লাস্টিক। পরোক্ষ ভাবে দায়ী বাসিন্দাদের একাংশও। পুর কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, প্রতিদিন রাশি-রাশি প্লাস্টিক জমছে খোলা নালায়। ফলে, জল আটকে। আর বাসিন্দাদের বারবার বলা হলেও বাজার থেকে আনা আনাজ-মাছ-মাংসের পলিব্যাগ, বিস্কুট, পাঁউরুটির প্লাস্টিকের প্যাকেট বা শ্যাম্পু, সাবানের ভুরি-ভুরি পাউচ ফেলা হয় নালায়। তার জেরে সমস্যা বাগে আসে না পুরোপুরি।
কালনা শহরে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বাস। ব্যাঙ্ক, কলেজ, স্কুলে বাইরে থেকেও প্রতিদিন আসেন বহু জন। পুরাতাত্ত্বিক নির্দশনের টানে আনাগোনা থাকে পর্যটকেদেরও। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই জমা জলে হাঁটাচলা করতে হয় শহরের বহু জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পাশ দিয়ে যাওয়া খোলা নালাগুলির গভীরতা অত্যন্ত কম। তার উপরে নোংরা জমে জল ধারণ ক্ষমতা আরও কম। ফলে টানা বৃষ্টি হলে রাস্তাই যেন পুকুর।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের আমলাপুকুর, বৈদ্যপুরমোড়, ন’নম্বর ওয়ার্ডের মহিষমর্দ্দিনী ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন এলাকা, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শাসপুর গ্যাস গোডাউন লাগোয়া রাস্তা থেকে হাসপাতালমুখী রাস্তারও একই হাল। অনেক সময় রাস্তা লাগোয়া বাড়ি এবং দোকানঘরেও জল ঢুকে পড়ে, দাবি তাঁদের। শহরের এক বাসিন্দা প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিকাশি সমস্যা পুরোপুরি মেটাতে গেলে পুরসভাকে মাস্টার প্ল্যান করতে হবে।’’এর সঙ্গেই পুরকর্মীরা প্রতিদিন নালা পরিষ্কার না করাতেই জমা প্লাস্টিকে জল আটকে যায় বলে ক্ষোভ তাঁর।
পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের জল বৈদ্যপুর মোড় হয়ে একটি বড় নালার মাধ্যমে বেহুলা নদীতে পড়ে। নালার সঙ্গে নদীর সংযোগের জায়গায় প্রায়ই দেখা যায় জমাট বাঁধা প্লাস্টিক। স্থানীয় বাসিন্দা প্রমিলা ঘোষ বলেন, ‘‘এক সময় শহরে প্রচুর বড় বড় পুকুর ছিল। ফলে, ভারী বৃষ্টি হলেও জল পুকুরে গিয়ে পড়তে দেরি হত না। এখন অনেক পুকুর মজে গিয়েছে, বোজানো হয়েছে। নিকাশি সমস্যাও বেড়েছে।’’ অন্য বাসিন্দাদেরও দাবি, পুকুর সংস্কার করা হলে এক দিকে নিকাশি ব্যবস্থার সুরাহা হবে, আবার মশা-মাছির প্রকোপও কমবে। সেই সঙ্গে শহরের ক্রমবর্ধমান আয়তন ও শহরবাসীর তুলনায় পুরসভার সাফাইকর্মী অপ্রতুল বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
পুরসভার দাবি, বেআইনি প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে লাগাতার অভিযান, জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবহার কমেছেও অনেকখানি। তবে গৃহস্থালীর জিনিসপত্রের সঙ্গে যে প্লাস্টিক আসে তা নালায় ফেলে দেন অনেকেই। তাতেই বাড়ে সমস্যা। আবার বৈদ্যপুর মোড়ের মতো এলাকায় নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে অবৈধ দখলদারদারি নিয়েও মুশকিলে পড়তে হয় বলে পুরসভার দাবি। কারণ অনেকেই নর্দমা ঢেকে তার উপরে দোকান খুলে বসেন।
পুরভোটের প্রচারে নিকাশি-সমস্যা তাদের হাতিয়ার হবে বলে মনে করছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি ধনঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘নিকাশি শহরের খুবই বড় সমস্যা। শুরু থেকেই তা নিয়ে প্রচারে নামব।’’ ওয়ার্ড ধরে-ধরে তৃণমূলের ‘ব্যর্থতা’ ভোটারদের বোঝানো হবে বলেও তাঁর দাবি। প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ গোস্বামী বলেন, ‘‘মাস্টার
প্ল্যান ছাড়া, নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা যখন বোর্ডে ছিলাম তখন অনেকটা কাজ এগিয়েছিলাম। নকশাও হয়েছিল। নিকাশির জল শোধন করে ভাগীরথীতে ফেলতে পারলে সমস্যা মিটবে।’’
পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের যদিও দাবি, ‘‘এই বোর্ড সাফাইকে গুরুত্ব দিয়েছে। স্থায়ী সাফাই কর্মী কমে এলেও বহু অস্থায়ী সাফাই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ময়লার গাড়ি-সহ নানা জিনিসপত্র। জল জমার সমস্যা বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি রাস্তাও উঁচু করা হয়েছে। কংক্রিটের বড় নালাও তৈরি করা হয়েছে।’’ এ বার প্লাস্টিক নিয়ে আরও কড়া হবে পুরসভা, দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy