বড়িরার মুচিপাড়ায় ধসের জেরে এমনই হাল বাড়ির। ছবি: পাপন চৌধুরী
পশ্চিম বর্ধমানের মাটির তলায় কয়লা। রয়েছে ধস, অবৈধ খনেনর সমস্যাও। কিন্তু ‘অবৈধ’ ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইসিএল, বিসিসিএলের বা সরকারি খাসজমিতে যাঁরা বাস করছেন, বা অবৈধ ভাবে কয়লা কেটে রুটিরুজি সামলাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রকৃতই কতটা ব্যবস্থা নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে রয়েছে ধন্দ। ওই মহলের মতে, বিশেষ ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, এর সঙ্গে সব দলেরই রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। জড়িত, ভোটের রাজনীতি।
সম্প্রতি কুলটির দামাগড়িয়া খনি লাগোয়া কোড়াপাড়া ও বড়িরার মুচিপাড়ায় ধস নামে। ধসের কারণ হিসেবে উঠে আসে, দামাগড়িয়ায় বিসিসিএল-এর বৈধ খোলামুখ খনিতে ‘র্যাটহোল’ করে সুড়ঙ্গ বানিয়ে অবৈধ কয়লা খনন। প্রায় ২০০ মিটার লম্বা ও ১৫০ মিটার উচ্চতার পাথরের একটি চাঁই ভেঙে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধস কবলিত কোড়াপাড়ার অংশবিশেষ ও মুচিপাড়ার পুরো বস্তিটি বিসিসিএল-এর জমি ‘দখল’ করে গড়ে উঠেছে। ফলে, আইনি ভাবে সেখানে পুনর্বাসনের দায় নেই খনি কর্তৃপক্ষ ও বিসিসিএল-এর। স্থানীয়দের বার বার এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন খনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, আসানসোল পুরসভা ওই বাসিন্দাদের জন্য বিসিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে বিকল্প জায়গা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা বিসিসিএল-এর ২ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ‘লিজ় হোল্ড’ জমি (যে জমির তলায় কয়লা আছে) চিহ্নিত করে দিয়েছে। কিন্তু আইনি কারণ না থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ব্যবস্থা? পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের বক্তব্য, “মানবিকতার খাতিরেই অনুরোধ করা হয়েছিল। আর এলাকাটি আসানসোল পুরসভার মধ্যে রয়েছে।” একই যুক্তি খনি কর্তৃপক্ষেরও।
অথচ, দেখা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওই দুই এলাকাতে বিদ্যুৎ, জল সবই রয়েছে। জল মানে রাস্তার জল। কী ভাবে তা এল? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বলেন, “নেতারা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।” কোন দলের নেতা, তা অবশ্য বলেন না। তা ছাড়া, চোখের সামনে বিদ্যুৎ ‘চুরি’ চলছে, তা নিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পাশাপাশি, এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ‘বিকল্প’ জায়গা সত্ত্বেও কেউ সেখানে যাননি। কেন? স্থানীয় বাসিন্দা মানিক কোড়া, বিপিন রুইদাসেরা বলেন, “এখান থেকে উঠে গেলে না খেয়ে মরতে হবে।” অথচ, কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কর্তা অনুপ গুপ্ত জানাচ্ছেন, ওই এলাকাগুলিতে থাকাটা খুবই বিপজ্জনক। পুরো অঞ্চলটি ফাঁপা, কার্যত ঝুলে আছে। একই ছবি নিমচা, সামডি, ডিসেরগড়, নরসমুদা, পাটমোহনা, কালীপাহাড়ির কিছু অংশেও। কিন্তু কেন জায়গা ছাড়ছেন না ওই সব এ?াকার বাসিন্দারা? যে জেলায় কয়লা চুরির তদন্ত নিয়ে এত তৎপর সিবিআই, সিআইডি, পুলিশ, ইসিএল, সেই জেলাতেই ফের উঠে আসছে ‘বিকল্প অর্থনীতি’র কথা। অনুপ বলছেন, “অবৈধ খাদান খুঁড়ে কয়লা চুরির এই কারবার দেখলে মনে হতেই পারে বৈধ ইসিএলের পাশে সমন্তরাল ভাবে আরও একটি অবৈধ ইসিএল চলছে!”
স্থানীয় সূত্রে দাবি, এই কারবারের সঙ্গেই জড়িত বাসিন্দাদের একাংশ। সেই বাসিন্দাদের ঘরে থাকা বিদ্যুৎ, জল নিয়ে কার্যত কোনও রাজনৈতিক দলের আমলেই ভোটের কারণে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হয় না, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও, অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “ভিত্তিহীন কথা। ১১ বছর ধরে কয়লা চুরি আটকাতে পারেনি রাজ্য সরকার। দিন দিন এলাকার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।” যদিও, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “ভোট বড় নয়, মানুষের জীবন বড়। আর ৩৪ বছরের রাজত্বে সিপিএম কয়লা চুরির পথপ্রদর্শক। আমাদের সময়ে, কয়লা মাফিয়ারা গ্রেফতার হচ্ছে। ওদের সময় তা হয়নি।” এ দিকে, কয়লা চুরির প্রসঙ্গে সিপিএম ও তৃণমূল দু’দলকেই তোপ দেগেছেন বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তিনি বলেন, “কে কত বড় কয়লা চোর তারই প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই দু’দল। আমরা এর স্পষ্ট বিরোধী। তাই আমাদের দাবিতেই সিবিআই কয়লা চুরির মামলা করে চোরেদের ধরছে।” কিন্তু তিন দলই ভোটের কারণে, অবৈধ ভাবে যাঁরা বাস করছেন, রুটিরুজির সংস্থান করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্য সে ভাবে সুর চড়ায়নি, দাবি শহরবাসীর। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy