ভাঙচুরের পর। — নিজস্ব চিত্র
নার্সিংহোম নিয়েই যেন যত কাণ্ড বর্ধমানে!
দিন কয়েক আগেই শিশু বিক্রিতে নাম জড়িয়েছিল শহরের এক নার্সিংহোমের। তার ঠিক পরে অভিযান চালিয়ে পরিকাঠামোর অভাব পেয়ে প্রশাসন বন্ধ করে দেয় আরও কয়েকটি। এ বার চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগে ভাঙচুর হল আর এক নার্সিংহোমে। বর্ধমান শহরের ভাঙাকুঠির ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, মোটরবাইক, ট্রাক্টর, গাড়িতে লোক এনে তাঁদের সংস্থায় তাণ্ডব চালান রোগীর পরিজনেরা। লাঠি, শাবল, পাথর ছুড়ে ভাঙচুর চলে। দুই ডাক্তার ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী আহত হন। পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি করা হয় বলে অভিযোগ। ন’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভাতারের কামারপাড়া-হরিবাটি গ্রামের শেখ মজনু আলি (৩২) অ্যাপেনডিক্সে অস্ত্রোপচার করাতে শনিবার দুপুরে ভর্তি হন শহরের নবাবহাটের একটি নার্সিংহোমে। পরিবারের দাবি, ভাতার থেকে ১৮ কিলোমিটার মোটরবাইক চালিয়ে জেলা সদরে এসেছিলেন মজনু। রীতিমতো শক্ত-সমর্থ ছিলেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মামনি বেগম। সন্ধ্যায় সেখানে অস্ত্রোপচার হওয়ার পরে অসুস্থতা বাড়ে ওই যুবকের। তখন তাঁর অস্ত্রোপচার করা ডাক্তার কামাল হোসেন জিটি রোডের উপরে ভাঙাকুঠির একটি নার্সিংহোমের আইসিইউ-য়ে ভর্তি করান তাঁকে।
মামনিদেবীর অভিযোগ, “আমাদের না জানিয়ে নার্সিংহোম বদলানো হয়। রাত পর্যন্ত স্বামী ভাল ছিলেন বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ হঠাৎ ওরা বলল, উনি আর নেই!”
ভাঙাকুঠির ওই নার্সিংহোমের আরএমও জয়দেব বসু বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, মৃত্যুসংবাদ দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সাতটি মোটরবাইক, তিনটে যাত্রীবাহী গাড়ি ও একটি ট্রেলার-সহ ট্রাক্টরে প্রায় একশো জন লাঠি-শাবল নিয়ে নার্সিংহোমের বাইরে ও ভিতরে হামলা করে। নার্সিংহোমের সহকারী ম্যানেজার রাজু দত্তের দাবি, “তখনও আলো ফোটেনি। লাঠি, শাবল হাতে কয়েকজন বাইরের কাচ ভাঙতে শুরু করে। কিছু বোঝার আগেই ভিতরে ঢুকে চিকিৎসকদের চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে।’’ সেখানে চিকিৎসাধীন রহমতুল্লা শেখ, সঞ্জয় খাঁ-দের অভিজ্ঞতা, “চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে উঠে লোকগুলোর ওই মারমুখী চেহারা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’’
ঘটনাস্থলে গিয়ে এ দিন দেখা গেল, নার্সিংহোমের বাইরে প্রচুর পাথর পড়ে রয়েছে। দোতলার প্রতিটি বিভাগে ভাঙচুরের চিহ্ন স্পষ্ট। আইসিইউ-র কাচের দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্ধমান থানার আইসি শান্তনু মিত্রর দাবি, গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ গেলে জনতার একাংশ তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে। পরে বিরাট বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ট্রেলার-সহ ট্রাক্টর আটক করেছে পুলিশ। ট্রেলারে প্রচুর খোয়া রাখা ছিল। বেলা বাড়তে কয়েকজন রোগীকে নিয়ে চলে যায় তাঁদের পরিবার।
বছর সাতেক আগে শাড়ি বিক্রেতা শেখ মজনুর সঙ্গে গলসির মামনিদেবীর বিয়ে হয়। পাঁচ বছরের মেয়ে রয়েছে দম্পতির। নার্সিংহোমে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে মজনুর ভাই আজফর আলি শেখ ও খুড়শ্বশুর মানিক মণ্ডল দাবি করেন, “কী এমন হল যে অ্যাপেনডিক্স অস্ত্রোপচারের রোগীকে নার্সিংহোম বদলে আইসিইউতে রাখতে হল? আমাদের ধারণা, ভুল চিকিৎসাতেই আমাদের ছেলে চলে গেল!” নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং শল্য চিকিৎসক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন মামনিদেবী। কামাল হোসেনের বক্তব্য, ‘‘যেখানে ওই যুবক প্রথমে ভর্তি হন, সেখানে আইসিইউ নেই। অপারেশনের পরে উনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াতেই ওকে অন্যত্র সরাতে হয়েছিল। সব তথ্য রয়েছে। ময়না-তদন্ত করানো হলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় জানিয়েছেন, ঘটনাটা তাঁদের কানেও এসেছে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy