মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । — ফাইল চিত্র।
আচমকাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলে যাওয়া। সে পরিস্থিতিতে কাটাতে হয়েছে দু’টি বছর। অনলাইন ক্লাস হলেও, প্রত্যন্ত এলাকার অনেকেই তাতে পুরোদমে যোগ দিতে পারেনি। তাই স্কুল যখন আবার খুলেছে, পড়াশোনার অভ্যাস থেকে কেউ-কেউ চলে গিয়েছে অনেকটাই দূরে। মাধ্যমিক দিতে চলা পড়ুয়াদের একাংশ ও তাদের অভিভাবকদের আশঙ্কা, পরীক্ষাতেও এর প্রভাব পড়বে।
কালনার আঙ্গারসন এমএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার মাধ্যমিক দিতে চলা এক ছাত্র যেমন জানায়, করোনা-কালে অনলাইনে তেমন পড়াশোনা হত না। স্কুল খোলার পরে দশম শ্রেণির অঙ্ক, পদার্থবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলি পড়তে বেশ সমস্যা হয়েছে। কালনারই পিন্ডিরা গ্রামের এক ছাত্রীর বাবার নিজস্ব জমি নেই। করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের আয় ঠেকে তলানিতে। বাধ্য হয়ে বাবার সঙ্গে তাকে পাট ছাড়ানোর কাজ করতে হয়েছিল। সম্প্রতি মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলার কাজও করেছে সে। তার কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন স্কুলে যাওয়া হয়নি। বাড়িতেও তেমন পড়াশোনা হত না। স্কুল খোলার পরে পড়ায় মন বসাতেই অনেক সময় চলে গিয়েছে।’’
প্রত্যন্ত এলাকার পরীক্ষার্থীদের অনেকের বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘদিন লেখার অভ্যাস ছিল না। স্কুল খোলার পরে কিছুটা গতি এলেও, সব প্রশ্নের উত্তর সময়ে লিখে আসতে পারা যাবে কি না, সে নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’ কালনার এক গৃহশিক্ষক সুদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘এ বার যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের অনেকেরই ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, অঙ্কে দুর্বলতা থেকে গিয়েছে।’’ পূর্বস্থলীর গয়ারাম দাস বিদ্যামন্দিরের এক ছাত্রের বাবা চা বিক্রি করেন। ছাত্রের মা বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে গোটা পরিবারকে রুটি-রুজির জন্য লড়তে হয়েছিল। দীর্ঘদিন পড়াশোনার পরিবেশ পায়নি ছেলে। পরীক্ষার ফল যা হবে, তা মেনে নেব।’’
ভাতারের উসা গ্রামের এক ছাত্রের বাবা বাসকর্মী। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দু’বছর কাজ ছিল না বললেই চলে। ছেলেকে না গৃহশিক্ষক, না স্মার্ট ফোন— কিছুই দিতে পারিনি। তখন স্কুলটা খোলা থাকলে ছেলের অনেক সুবিধা হত।’’ ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘স্কুল খোলা থাকলে নিয়মিত পড়াশোনার একটা অভ্যাস থাকে। কোনও বিষয়ে সমস্যা হলে শিক্ষকেরা সাহায্য করেন। দু’বছর সেই সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।’’ এক ছাত্রী জানায়, স্কুল চালুর পরে অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে তার অসুবিধা হয়েছে। নিয়মিত স্কুল হলে খামতি থাকত না বলে মনে করছে সে। বর্ধমান ১ ব্লকের কৃষ্ণপুর হাইস্কুল, বর্ধমান ২-এর বড়শুল সিডিপি স্কুলের পড়ুয়াদের অনেকেরও একই দাবি।
অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, করোনা-কালে পরীক্ষাও হয়েছে অনলাইন পদ্ধতিতে। ফলে, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে স্কুলে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস ভুলেছে পড়ুয়ারা। মাঝে শুধু মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে অফলাইন পদ্ধতিতে। তাতে ফারাক কতটা মিটেছে, সে নিয়ে সন্দিহান অভিভাবকদের বড় অংশই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy