উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ বিপুল টাকা কোষাগারেই পড়ে রয়েছে।
জেলা পরিষদের দুই শীর্ষ কর্তারই ব্লক উন্নয়নের টাকা খরচের দিক থেকে পিছনের সারিতে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই দুটি ব্লকের দুটি পঞ্চায়েত কার্যত ‘উদাসীন’। ফলে বিপুল টাকা কোষাগারেই পড়ে রয়েছে।
ব্লক দুটি হল, রায়না ১ ও কালনা ২। রায়না ১ হল জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার ব্লক। ঘটনাচক্রে রায়নার বিধায়কও শম্পা। আর কালনা ২ ব্লকের বাসিন্দা হলেন জেলা পরিষদের তৃণমূলের প্রথম সভাধিপতি তথা বর্তমান সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু। জানা গিয়েছে, কালনা ২ ব্লকের বাদলা পঞ্চায়েতের সদস্যেরা অর্থ কমিশনের বৈঠকে দিনের পর দিন গরহাজির থাকায় উন্নয়নের কোনও কাজ নিয়ে আলোচনা হয়নি। ফলে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্টে বাদলা পঞ্চায়েত প্রাপ্য টাকার ১.৯৮ শতাংশ উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পেরেছে। আর রায়না ১ ব্লকের পলাশন পঞ্চায়েতও গত দু’বছর ধরে বিভক্ত। সদস্যদের ‘দ্বন্দ্বে’ ভাটা পড়েছে উন্নয়নে। বৈঠক না হওয়ায় খরচও আটকে রয়েছে। ৩৩ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে সেখানে।
গত দু’টি আর্থিক বছরে কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওনা টাকার সবটা খরচ করে উঠতে পারেনি পূর্ব বর্ধমান। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত মিলিয়ে এ বছর মার্চের শেষে ৫০ কোটির মতো টাকা পড়ে রয়েছে জেলার খাতে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে উন্নয়নের টাকা পড়ে থাকা নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রিপোর্ট অনুযায়ী পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে গত আর্থিক বছরে (২০২১-২২) পূর্ব বর্ধমানের ২১৫টি পঞ্চায়েত ১৭৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা পেয়েছে। এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫৬ কোটি ৬৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা (৯০.২৩ শথাংশ)। অর্থাৎ হাতে রয়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৯৫ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। জেলার ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতিতেও ১২ কোটি ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে। তারা পেয়েছিল ৪৫ কোটি ২৭ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে ৩৩ কোটি ২১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা (৭৩.৩৬ শতাংশ)। আর জেলা পরিষদ পেয়েছিল ৫৮ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। এখন সেখানে পড়ে রয়েছে ২০ কোটি ৩৭ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা (৬৪.৯৬ শতাং)। তিনটি স্তরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে জেলা পেয়েছিল মোট ২৭৭ কোটি ৫ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে ২২৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ১২ হাজার টাকা (৮২.১৭ শতাংশ)। পড়ে রয়েছে ১৮ শতাংশের মতো টাকা। নবান্ন সূত্রে জানা যায়, খরচের দিক থেকে পূর্ব বর্ধমানের আগে রয়েছে হাওড়া (৯৮ শতাংশ), আলিপুরদুয়ার (৯২ শতাংশ), পূর্ব মেদিনীপুর (৯৩.৩৫ শতাংশ) ও হুগলি (৮৬ শতাংশ)। গোটা রাজ্যে খরচ হয়েছে ৭৬ শতাংশ টাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, এ বছরের জানুয়ারিতে একটি রিপোর্ট-কার্ড বার করা হয়। সেই সময় ২০২১-২২ সালে প্রাপ্য টাকার ৪৯ শতাংশ খরচ হয়েছিল জেলায়। আর আর্থিক বছরের শেষে ৮২ শতাংশের বেশি খরচ করা গিয়েছে। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে ৩৩ শতাংশের বেশি টাকা উন্নয়নের জন্য খরচ হয়েছে। প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, পঞ্চায়েত সমিতিগুলির মধ্যে প্রাপ্য টাকার একশো শতাংশ খরচ করেছে গলসি ২ ব্লক। মন্তেশ্বর ও খণ্ডঘোষের প্রতিটি পঞ্চায়েতও প্রাপ্যের সব টাকা উন্নয়নের খাতে খরচ করেছে। কিন্তু খরচের দিক থেকে পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েত স্তরে পিছিয়ে রয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতির ব্লক। পঞ্চায়েত সমিতিতে রায়না ১ ব্লক খরচ করেছে ৩৪.৫৯ শতাংশ, রায়না ২ ব্লকের খরচ ৫৭.৩৯ শতাংশ। আর কালনা ২ ব্লক খরচ করেছে ৭০.৫২ শতাংশ। জেলার গড়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বর্ধমান ২, পূর্বস্থলী ১-এর মতো ১২টি ব্লক। আর পঞ্চায়েতের খরচের দিক থেকে জেলার গড় খরচের চেয়ে কালনা ২, রায়না ১, রায়না ২, বর্ধমান ২-সহ ১৭টি পঞ্চায়েত পিছিয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি কাটোয়ায় এক বৈঠকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ পঞ্চায়েত ভোটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সব টাকা খরচ হয়নি। মমতাদি (মুখ্যমন্ত্রী) উন্নয়নের টাকা ফেলে রাখা যাবে না বলেছেন। প্রধানেরা বিষয়টি দেখুন।’’ তার পরেও আর্থিক বছরের শেষে উন্নয়নের টাকা খরচ না হওয়ায় সরব বিরোধীরা। বিজেপি নেতা সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘টাকা চেয়ে কেন্দ্রের কাছে হত্যে দিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদেরা। অথচ কেন্দ্রের দেওয়া গ্রামের উন্নয়নের টাকা পড়ে থাকছে!’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘গ্রামের উন্নয়নের চেয়ে দুর্নীতিতে বেশি নজর তৃণমূলের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy