বর্জ্য সংগ্রহের গাড়ি পড়ে রয়েছে কালীপাহাড়ি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। নিজস্ব চিত্র
দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং শহরের বাতাসের গুণমান বজায় রাখতে একটি জলকামান এবং বর্জ্য সংগ্রহকারী চারটি আধুনিক যান কিনেছে আসানসোল পুরসভা। এ জন্য পুরসভার খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। অথচ, বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’-এ অব্যবহৃত অবস্থায় বর্জ্য সংগ্রহের ৪৪টি যান পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
পুর-এলাকায় বাতাসের গুণমান বজায় থাকার জন্য গত বছর আসানসোল পুরসভাকে পুরস্কৃত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’-এ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাধ্যমে শহরের বায়ু দূষণ রোধে পুরস্কার হিসেবে সাত কোটি টাকা পুরসভাকে দেওয়া হয়। মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “ওই টাকা বেশ কিছু সদর্থক করা হয়েছে। কেনা হয়েছে একটি জলকামান ও বর্জ্য সংগ্রহের চারটি যান। শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে এগুলি অবিরাম কাজ করবে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জল কামানটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জল ছেটাবে। প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় জল ছেটানো যাবে। ফলে, বাতাসের ধূলিকণা মাটিতে বসে যাবে। এটির দাম প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা। আরও প্রায় চার কোটি টাকা খরচ করে ওই স্বয়ংক্রিয় যানগুলি কেনা হয়েছে। যেগুলি রাস্তা দিয়ে চলার পথেই বর্জ্য শোষণ করে নেবে। পরে আবর্জনা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে খালি করা হবে।
কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা তথা শহরের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁর দাবি, “আমি মেয়র থাকাকালীন পুরসভা বর্জ্য সংগ্রহের প্রায় ১৫৪টি যান কিনেছিল। এর মধ্যে ৪৪টি যান এখনও ডাম্পিং গ্রাউন্ডে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সেগুলি ব্যবহার না করে ফের কয়েক কোটি টাকা খরচ করার অর্থ, জনগণের করের টাকা নষ্ট হওয়া।” তবে, পুরসভার অন্যতম ‘ডেপুটি মেয়র’ অভিজিৎ ঘটকের পাল্টা তোপ, “সে সময় অপরিকল্পিত ভাবে পুরসভার তহবিলের অর্থ খরচ করে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক এমন যান কেনা হয়েছিল। ভাবাই হয়নি যানগুলির চালকদের বেতন কোথা থেকে আসবে। আগের মেয়র সেগুলি ব্যবহার করলেন না কেন? এখন পুরসভার আর্থিক ক্ষমতায় ১১০টি বর্জ্য নিকাশি যান চালানো হচ্ছে।”
তবে, সম্প্রতি পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে গিয়েও দেখা গিয়েছে, সার দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের বেশ কয়েকটি যান দাঁড় করানো আছে। সূত্রের খবর, জামুড়িয়ার ডাম্পিং গ্রাউন্ডেও এমন কিছু যান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম-ও। পুরসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা গোলাম সরওয়ার বলন, “তখনও পরিকল্পনাহীন কাজ হয়েছে। এখনও তাই-ই হচ্ছে। ফল ভুগছেন শহরবাসী।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “কাটমানি খাওয়াটাই যেখানে মূল লক্ষ্য, সেখানে পরিকল্পনা ছাড়া কাজের মানেই হল, অর্থের অপচয়। এই বোর্ডের সঙ্গে আগের বোর্ডের এ ক্ষেত্রে হুবহু মিল রয়েছে।” যদিও, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “বিরোধীরা কোনও দিনই ভাল কিছুদেখতে পান না।”
এ দিকে, মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “বাতাসের গুণমান বজায় রাখতে পুরস্কার হিসেবে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা বায়ুদূষণ এবং বর্জ্য দূষণ রোধের জন্যই খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই এগুলি ওই টাকায় কেনা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy