বিস্ফোরণের পড়ে গুঁড়িয়ে যাওয়া ক্লাবঘর।—অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
নমাজ সেরে মাঠের পাশে জিরোচ্ছিলেন বৃদ্ধ। আচমকা বিস্ফোরণে উড়ে গেল পিছনের ক্লাব-ঘর। সোমবার ভোরে বর্ধমানের কাটোয়ার শ্রীবাটি গ্রামে ওই বিস্ফোরণে প্রাণ গেল লাল মহম্মদ শেখের (৬৫)। পুলিশের অনুমান, শ’দেড়েক সুতলি বোমা (পেটো) মজুত করা ছিল ‘মোহনবাগান স্পোর্টিং’ নামের ওই ক্লাবটিতে। পরে বম্ব স্কোয়াড ও সিআইডি ক্লাবের সামনে একটি বেদির (ক্লাব-কর্তাদেরই গড়া) নীচ থেকে ৩২টি সকেট-বোমা উদ্ধার করে।
শ্রীবাটি গ্রামে সিপিএম বরাবরই শক্তিশালী। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের এডি়জি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাকে জেলা পুলিশ যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে নিহতের পরিবার সিপিএমের তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগের তদন্ত করছে সিআইডি।’’ যদিও ওই অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নজর ঘোরানোর জন্য এ সব আজগুবি কথা বলা হচ্ছে। তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াইয়ের প্রভাব এখন সব জেলার সর্বত্র পড়ছে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ নমাজ শেষে ওই ক্লাবের পিছনে নতুন পুকুরের ধারে মাঠে বসেছিলেন লাল মহম্মদ। বিস্ফোরণে ক্লাব-ঘরের ছাদের কংক্রিটের চাঙ়ড়, ভাঙা ইটের টুকরো ছিটকে লাগে তাঁর গায়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি বাড়িও। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবঘরটির দেওয়াল-ছাদ ভেঙে, টিনের দরজা উড়ে পিছন দিকে গিয়ে পড়েছে।
চাঙর ভেঙে এসে গায়ে পড়ায় মারা যান লাল মহম্মদ
এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের দাবি, ক্লাবটি বেশির ভাগ দিন বন্ধ থাকত। মাঝেমধ্যে রাতের দিকে লোকজন দেখা যেত বা টিভি চলার আওয়াজ মিলত। ক্লাবের ‘মাথা’দের সঙ্গে এলাকার দখল নিয়ে গ্রামেরই আর এক গোষ্ঠীর গোলমাল চলছিল। মাস কয়েক আগে সেই গোলমালের জেরে গ্রামের অন্যত্র বোমাও ফেটেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
মাস তিনেক আগে শ্রীবাটি পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে যায়। ওই গ্রামের জেলা পরিষদের সদস্য সাহেবা খাতুনের সঙ্গে সিপিএমের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দেন। লাল মহম্মদের স্ত্রী সাবিলা বিবি যে তিন জনের নামে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন ওই ক্লাবের দুই সম্পাদক— আমির আলি মণ্ডল ও জিয়ার আলি মণ্ডল। তাঁরাও সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে সে সময় দল বদলান বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তৃতীয় অভিযুক্ত এলাকার সিপিএম কর্মী মতি মণ্ডল। এ দিন অবশ্য তাঁদের কাউকেই খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসী। ক্লাবঘর গুঁড়িয়ে গিয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের গড়ে দেওয়া বেদির নীচে বোমা মেলায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বাবু পোড়েল, লাল্টু বাগদির মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘বেদির তলায় গর্ত ছিল। কিন্তু সেখানে যে বোমা আছে, টের পাইনি। দিনেদুপুরে ফেটে গেলে কী যে হতো!’’ নিহতের স্ত্রী সাবিলা বিবির ক্ষোভ, ‘‘সিপিএমের লোকজন কী মতলবে ক্লাবে বোমা রেখেছিল জানি না। বেঘোরে মরলেন আমার স্বামী।’’
এলাকার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘ক্লাবটার ঠিক উল্টো দিকে তৃণমূলের পতাকা টাঙানো রয়েছে। দিন তিনেক আগেও তৃণমূলের লোকজন ওই ক্লাবে বৈঠক করেছে। বোঝাই যাচ্ছে, কারা এর পিছনে রয়েছে।’’ স্থানীয় নেতা তথা তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুলের দাবি, এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।
বেদির নীচ থেকে বোমা উদ্ধার চলছে। —অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy