কিছু দিন আগেই বার্নপুর রোডে বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। এর কিছু দিনের মধ্যেই, এ বার বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল এক সাইকেল আরোহীর। সোমবার সকালে আসানসোল দক্ষিণ থানার ডামরার ঘটনা। পুলিশ জানায়, মারা যান স্থানীয় বাসিন্দা গরিবন ধরি (৫৫)। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং রাস্তা অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ডামরার কাছে দামোদর থেকে বালি তুলে ট্রাকে বোঝাই করে সেটি কলীপাহাড়ির দিকে যাচ্ছিল। সে সময় ঘুষিক কোলিয়ারির সামনে এক সাইকেল আরোহীকে চাপা দেয় ট্রাকটি। ট্রাকটিকে ঘটনাস্থলে রেখে চালক ও খালাসি চম্পট দেন। স্থানীয়েরা খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছে বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, ভাঙচুর করা হয় ট্রাকটিতেও। নদের ঘাটে এবং আশপাশে বেশ কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়েছিল, সেগুলিও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পুলিশ কোনও রকমে দেহটি উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

তবে এর পরে ঘুষিক এবং কালীপাহাড়ি রাস্তা ঘণ্টা দুয়েকের জন্য অবরোধ করেন বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাকর মিশ্রের অভিযোগ, “প্রতিদিন রাতে নদ থেকে বালি তুলে, শতাধিক ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এগুলির জন্য সাধারণ মানুষের চলাচল প্রায় বন্ধ। বার বার জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাসখানেক আগেও ট্রাকের চাকায় জলের পাইপ ও রাস্তা ভেঙে যাওয়ার জন্য অবরোধ করা হয়েছিল। অভিযোগ, সে সময় বালি বোঝাই ট্রাক চলাচলের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনার প্রতিশ্রুতি দেয় পুলিশ। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি বলে। এ দিকে, বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, প্রায় প্রতিটি ট্রাকই নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে অনেক বেশি বালি বোঝাই করে যাতায়াত করে। সে জন্যই এমনদুর্ঘটনা ঘটছে।

এ দিন এলাকায় বিক্ষোভ দেখানোর পরে স্থানীয়েরা আসানসোল দক্ষিণ থানাতেও আধ ঘণ্টার জন্য বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা মৃতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। সে সঙ্গে, নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বালি বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবি জানান।

পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে, অবশ্যই পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশ পুরো ঘটনারই তদন্ত করছে। এলাকায় বালি বোঝাই ট্রাক চলাচলের উপরে নিয়ন্ত্রণের যে দাবি উঠেছে, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।”

পর পর বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্রতিওয়ারি টুইটারে লেখেন, “ফের বালি মাফিয়াদের জন্য আরেক জনের মৃত্যু ঘটল।” গোটা বিষয়টি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও সরব হন তিনি। পাশাপাশি, আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। যদিও, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, “বিরোধীরা যে কোনও মর্মান্তিক ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করতে অভ্যস্ত। ওদের কথার কোনও ভিত্তি নেই। প্রশাসন সব দিক খতিয়ে দেখছে।” তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর অশোক রুদ্রের প্রতিক্রিয়া, “অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাক আমরা আর চলতেদেব না।”

এ দিকে, রেণুকা বাউড়ি নামে এক মহিলা পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন। সোমবার দুপুরে সালানপুর থানার দেন্দুয়া মোড়ে, চিত্তরঞ্জন রোডের ঘটনা। জখম মহিলাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সালানপুরের ন্যাকরাজোড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলা রাস্তা পারাপার করার সময় চিত্তরঞ্জন থেকে আসানসোলগামী একটি বাস তাঁকে ধাক্কা মারে। তিনি পড়ে যান। তাঁর হাত ও পায়ের উপর দিয়ে বাসটি চলে যায়। পুলিশ বাস ও চালককে আটক করেছে। এই ঘটনার জেরে কিছুক্ষণ চিত্তরঞ্জনে যান চলাচল ব্যাহত হয়।