বাসে যাত্রীরা। সোমবার আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র
‘মাস্ক’ না পরে জোর করে বাসে চাপছেন যাত্রীদের একাংশ, বলে অভিযোগ। বাস মালিকেরা জানান, যাত্রীদের একাংশের এই মনোভাবের জন্য রাস্তায় বাস নামাতে চাইছেন না চালক ও কন্ডাক্টরেরা। এই অবস্থায় আসানসোল মহকুমার একাধিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সমস্যার সমাধানে তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের তরফে বার-বারই ঘোষণা করা হচ্ছে ‘মাস্ক’ ছাড়া, পথে বেরনো নিষেধ। নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু সোমবার সকালে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন রুটের বাস ও মিনিবাসের একাধিক যাত্রীর মুখে ‘মাস্ক’ নেই। কারও আবার থুতনিতে ‘মাস্ক’ ঝুলছে। কেন ‘মাস্ক’ পরেননি? প্রশ্ন শুনে কেউ বিরক্ত হচ্ছেন। কেউ বা রুমাল বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন। কেউ পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘‘মাস্ক’ পরে কী লাভ?’’ এমন এক মহিলা যাত্রী বলেন, ‘‘চাঁদা পর্যন্ত যাব। এটুকু রাস্তা ‘মাস্ক’ পরারদরকার নেই।’’
যাত্রীদের এই মনোভাব প্রসঙ্গে একটি মিনিবাসের কন্ডাক্টর শতনাম যাদব বলেন, ‘‘মাস্ক না পরে বাসে ওঠার জন্য প্রতিদিন অন্তত একশো জন যাত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে।’’ আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘এর জেরে অনেক চালকই গাড়ির চাবি মালিকদের হাতে ফেরত দিয়ে চলে গিয়েছেন।’’ তিনি জানান, অ্যাসোসিয়েশনের তরফে নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে কোনও সময়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা বিমা করানোর উপরে জোর দিচ্ছেন। সুদীপবাবু বলেন, ‘‘এমনিতেই ক্ষতি করে বাস চালাচ্ছেন মালিকেরা। এর উপরে বিমার টাকা দেওয়া সম্ভবই নয়।’’ এই পরিস্থিতিতে আসানসোল থেকে বরাকর, রানিগঞ্জ, রূপনারায়ণপুর, চিত্তরঞ্জন-সহ প্রত্যন্ত রুটে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন, আসানসোল বড় বাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার রাস্তায় বাস অনেক কম নেমেছে।’’ দু-এক দিনের মধ্যে সংখ্যাটি আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁর।
তবে শুধু যাত্রীরা নন। কিছু কিছু বাসকর্মীকেও ‘মাস্ক’ ছাড়াই দেখা গিয়েছে এ দিন। এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, ‘মাস্ক’ ছাড়া, কিছুতেই বাসে চাপতে দেওয়া যাবে না। কেউ কথা না শুনলে পুলিশকে জানাতে হবে।
তবে বাস সঙ্কটের অন্য ছবি দুর্গাপুরে। সোমবার তিনটি বাদে আর কোনও মিনিবাস দুর্গাপুরের রাস্তায় নামেনি। কেন এমন পরিস্থিতি? বাস মালিকেরা জানান, যাত্রী না থাকায় লকডাউনের পরে, গড়ে মাত্র ৪০টি মিনিবাস প্রতিদিন চলত। তবে গত কয়েকদিনে দুর্গাপুরে করোনা সংক্রমণ, ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকা বেড়ে যাওয়া, রবিবার প্রশাসনের তরফে কিছু বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পরে পরিস্থিতি বদলে যায়।
রবিবার আলোচনার পরে, মিনিবাস মালিকদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়, একে যাত্রী প্রায় নেই। তার উপরে বাসকর্মীরাও সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন। তাই আপাতত সোমবার থেকে মহকুমা জুড়ে পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শহরের দু’টি বাসস্ট্যান্ডে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেল, তিনটি মিনিবাস চলছে। প্রান্তিকা-দুর্গাপুর ভায়া বি-জ়োন, প্রান্তিকা-দুর্গাপুর ভায়া ৫৪ ফুট ও শহরের বাইরের রুটের একটি মিনিবাস। বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েন বহু যাত্রী। একটি বেসরকারি কারখানার কর্মী রাজীব সিংহ দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার এক আত্মীয় ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর ছুটি হয়েছে। তাঁকে নিয়ে বাড়ি যাব। কিন্তু মিনিবাস চলছে না।’’ অটো ভাড়া করে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে জানান তিনি। পুরুলিয়া থেকে পাঁচ যুবকের একটি দল জানালেন, বিধাননগরে বেসরকারি সংস্থায় কাজের খোঁজে যাচ্ছেন তাঁরা। বাস না পাওয়ায় তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন।
এ দিন অবশ্য মিনিবাস মালিকদের তরফে জানানো হয়, মহকুমা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ না রেখে নিয়ন্ত্রণ করতে। মিনিবাস মালিকদের অন্যতম সংগঠন ‘দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কাজল দে বলেন, ‘‘বাসকর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব রুটেই যাতে দু’একটি করে মিনিবাস চলে, বাসকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পরে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy