এ ভাবেই নদীর স্রোতে ভাঙছে পাড়। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির দাওয়ায় দাঁড়িয়ে কালো করে আসা আকাশের দিকে তাকালেই কপালে ভাঁজ পড়ে ষাটোর্ধ্ব রাধেশ্যাম ঘোষের। বর্ষা মানেই তাঁদের কাছে আতঙ্ক। ভাগীরথীর ভাঙনে ঘরছাড়া হওয়ার দুশ্চিন্তায় বিনিদ্র রাত শুরু কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ ঘোষপাড়ার প্রায় ১৩০০ পরিবারের। ফি-বছর বর্ষায় প্রশাসনের একরাশ প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু মেলে না। কিন্তু এ বার অগ্রদ্বীপ-বেথুয়াডহরি রাস্তার ২ কিলোমিটার সংস্কারের ব্যাপারে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেওয়ার পরে আশায় বুক বাঁধছেন অগ্রদ্বীপবাসী। শনিবার সেচ দফরের আধিকারিকেরা সেই এলাকা পরিদর্শন করেন।
অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের ১৩টি গ্রাম সংসদদের মধ্যে মাঝেরপাড়া, সরোয়ারি, গোঁসাইবাড়ি-সহ ৬টি ভাঙন-বিধ্বস্ত। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন প্রায় হাজার দশেক মানুষ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘোষপাড়া। বর্ষায় ভাঙনে গত বছরও বাড়ি ভেঙেছে ঘোষপাড়ার গৌতম ঘোষের। এ বছরও কয়েক জন একচালা বাড়ি নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন। বছর পাঁচেক আগে চরবিষ্ণুপুরের প্রায় ৪০টি পরিবার ঘরছাড়া হয়। বাড়ির দাওয়ায় দাঁড়িয়ে ফণি ঘোষ বলেন, ‘‘নদীর গতিপথ পাল্টেছে। ফলে, ভাঙনের কবলে পড়েছে নতুন-নতুন এলাকা। নদীর বুকে অনেক জায়গাতেই চর জেগে উঠেছে।’’ ভাঙন প্রতিরোধে খাঁচা ফেলা হলেও স্টিমারের ধাক্কায় তা ভেঙে যায় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘বোল্ডার বা খাঁচা দিয়ে হবে না। বড় কোনও পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’
ভাঙনে ঘরবাড়ির পাশাপাশি কৃষিজমি, রাস্তাঘাট সবই নদীতে তলিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন্যার বালি ঢুকে কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। বছর এগারো আগে বন্যায় এই এলাকার সঙ্গে নদিয়ার যোগাযোগের রাস্তাটির প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ ভেঙে যায়। তার পর থেকেই যাতায়াতে সমস্যা শুরু। তখন রাজ্য সরকার রাস্তা নির্মাণ ও ৫০টি পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজ হয়নি, ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় রাস্তাটি সংস্কারের কথা জানান। শনিবার এলাকা পরিদর্শনে সেচ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিডিও শিবাশিষ সরকার, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নরেশ মণ্ডল। সেচ দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার শ্যাম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বিধায়কের কথা মতো অগ্রদ্বীপের রাস্তা দেখতে গিয়েছিলাম। ভাঙন আর হবে কি না, হলে কত দূর বাড়তে পারে সেটা দেখা হয়েছে। এর পরে একটি সমীক্ষা হবে। তার রিপোর্ট তৈরির পরে রাস্তা তৈরির ব্যাপারে আমরা এগোব।’’ তিনি জানান, অগ্রদ্বীপে এখন ভাঙনের পরিমাণ অনেকটাই কম। তবে ভাঙনগ্রস্ত এলাকা হিসেবে জল বাড়ার জন্য কিছু সমস্যা হবেই। সেটা মাথায় রেখে ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। তাঁর দাবি, নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy