আনাজ চাষে বিন্দু সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম বর্ধমানে চাষের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা সেচের জল। সেচের মূল উৎস ডিভিসির সেচখাল হলেও, জেলার সর্বত্র সেই জল মেলে না। তাই সাবমার্সিবল পাম্প, নদী-সেচ প্রকল্প, কুয়ো, পুকুর থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে সেচের সমস্যা মেটান চাষিরা। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচের এই সমস্যা দূর করতে এ বার কাঁকসা ব্লকে শুরু হয়েছে ‘বিন্দু সেচ প্রকল্প’। বেশ কয়েক জন চাষি ইতিমধ্যেই আনাজ চাষের জন্য এই পদ্ধতিতে সেচের জলের ব্যবস্থা করেছেন। কৃষি দফতরের দাবি, এই পদ্ধতিতে সেচ দিলে, জলের অপচয় যেমন কমে, তেমনই ফলনও ভাল হয়।
জেলায় মূলত কাঁকসা এলাকায় ধান থেকে আনাজ— সব চাষই বেশি হয়। এর মধ্যে আবার কাঁকসার আমলাজোড়া, মলানদিঘি, বিদবিহার, ত্রিলোচকন্দ্রপুরের মতো পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষিকাজ সব থেকে বেশি হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, বর্ষার সময়ে জলের সমস্যা খুব একটা না হলেও, বছরের অন্য সময়ে সেচের জলের সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। রবি মরসুম বা গরমের দিনে আনাজ চাষ করতে জল নিয়ে তৈরি হয় বড় সমস্যা। কোনও উৎস থেকে জল মিললেও, তা মাঠে আনাজে দেওয়ার সময় অপচয়ও হয়। আবার সব এলাকার জমির চরিত্রও সমান নয়। ফলে, জমির প্রতিটি জায়গায় সম পরিমাণ জল বণ্টন না হওয়ায়, ফলনেও সমস্যা দেখা দেয় বলে দাবি। আর জলের এই সমস্যা মেটাতে অনেকটাই কার্যকর ‘বিন্দু সেচ প্রকল্প’। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘বাংলা কৃষি সেচ যোজনা’র মাধ্যমে এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ চলছে। বিন্দু সেচ প্রকল্প ছাড়াও রয়েছে ‘ফোয়ারা সেচ প্রকল্প’।
কাঁকসা ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আনাজ চাষের জন্য বিন্দু সেচ প্রকল্প খুবই কাজের। কারণ, আনাজ চাষে খুব বেশি জলের প্রয়োজন পড়ে না। এর মাধ্যমে গাছের গোড়ায় জল দেওয়া যায়। যেটা ফোয়ারা সেচের মাধ্যমে হয় না। যতটা জলের প্রয়োজন, ঠিক ততটাই বিন্দু সেচের মাধ্যমে জল দিতে পারবেন চাষিরা। যে সব আনাজ সারিবদ্ধ ভাবে চাষ হয় যেমন টোম্যাটো, পটল, ঝিঙে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লঙ্কা প্রভৃতি আনাজ চাষে এই সেচ ব্যবহার করা হতে পারে। পাশাপাশি, কলা, পেঁপে, তরমুজ, বাদামের মতো ফসল চাষেও এই প্রকল্প ব্যবহার করা যেতে পারে।
কৃষি দফতরের দাবি, এক বিঘা জমিতে চাষ করতে চিরাচরিত প্রথায় যে পরিমাণ জল লাগে, এই প্রথায় চাষ করলে সে পরিমাণ জলে তিন থেকে চার বিঘা জমিতে চাষ করতে পারবেন চাষিরা। তা ছাড়া, রাসায়নিক দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা যাবে। ফলে, রাসায়নিক অপচয়ও কম হবে। ফসলের গোড়ায় জল দেওয়ার ফলে, ফলনও ভাল হবে।
কী ভাবে এটি কাজ করে? দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎস থেকে একটি মূল পাইপের মাধ্যমে জল জমির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। মূল পাইপ থেকে শাখা পাইপ নিয়ে যাওয়া হয় গাছের গোড়ার দিকে। সেই শাখা পাইপে ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্রের মুখে ‘ড্রিপার’-এর মাধ্যমে ফোঁটা ফোঁটা করে গাছের গোড়ায় জল পড়বে। চাষি মনোজ মোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তি চৌধুরীরা বলেন, “এই পদ্ধতিতে জলের অপচয় অনেকটাই কমেছে। আমরা উপকৃত হয়েছি।”
ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বিঘা জমির জন্য এই প্রকল্প তৈরি করতে খরচ পড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সেখানে ছ’হাজার টাকার মতো চাষিকে দিতে হবে। বাকিটা ভর্তুকি মিলবে। ব্লক সহ-কৃষি আধিকারিক অনির্বাণ বিশ্বাস বলেন, “জলের অপচয় কমানো, ফলন বৃদ্ধি ও ফসলের মান উন্নয়নও হয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে। কাজেই চাষিরা এগিয়ে এলে, তাঁরাই লাভবান হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy