Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Madhyamik 2023

এমএ পাশ মেয়ের উৎসাহে মাধ্যমিক পাশ করলেন মা এবং দাদা, বাবা বললেন, ‘ওই তো অনুপ্রেরণা’

আয়েশাদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষক। নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান পারভেজের বেশি দূর পড়াশোনা করা হয়নি।

Mother and son passed madhyamik examination from Shaktigarh

ফিরদৌসী উচ্চশিক্ষিতা। কিন্তু মা ও দাদা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি বলে ফিরদৌসীর আক্ষেপের অন্ত ছিল না। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শক্তিগড় শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ১৮:৫১
Share: Save:

সেই কবে স্কুল ছেড়েছিলেন। তার পর বিয়ে, সংসার, দুই সন্তানকে বড় করা। মেয়ে এমএ পাশ করেছেন। ছেলে অবশ্য বাড়ির অবস্থা ফেরাতে অল্পবয়সে রোজগারের সন্ধান শুরু করেছিলেন। তাই তাঁরও পড়াশোনা বেশি হয়নি। এখন অবশ্য মা ও ছেলে দু’জনেই মাধ্যমিক পাশ করলেন। সৌজন্যে এমএ পাশ মেয়ে। পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলার বাসিন্দা আয়েশা বেগম এবং পুত্র পারভেজ আলমের কাণ্ডে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। দু’জনেই আরও পড়াশোনা করতে চান।

ফিরদৌসী উচ্চশিক্ষিতা। কিন্তু মা ও দাদা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি বলে ফিরদৌসীর আক্ষেপের অন্ত ছিল না। জোর করেই মা এবং দাদাকে নতুন করে বইমুখো করেছিল সে। ফিরদৌসীর কথায় মা-ছেলে দু’জনেই এ বার মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। মেমারি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে বসেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন দু’জন। ফল বেরোতে দেখা গেল আয়েশা পেয়েছেন ৭০০-র মধ্যে ৩৮৫ নম্বর। পারভেজের প্রাপ্ত নম্বর ৪৬২।

আয়েশাদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষক। নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান পারভেজের বেশি দূর পড়াশোনা করা হয়নি। তবে বাড়ির ছোট মেয়ে, পারভেজের বোন ফিরদৌসী অবশ্য আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন। ইতিমধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেছেন। এখন চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। নিজে উচ্চশিক্ষিত হলেও আইসিডিএস কর্মী মা এবং দাদার স্বল্পশিক্ষিত হয়ে থাকাটা তাঁকে ব্যথিত করত। মা-দাদাকে এক রকম জোর করেই পড়তে বসাতেন। বাড়ির ছোট সদস্যের কথায় দু’জনেই লেখাপড়া শুরুর ব্যাপারে মনস্থির করে ঘাটশিলা সিদ্দিকিয়া সিনিয়র হাই মাদ্রাসা স্কুলে ভর্তি হন।

আয়েশা বলেন, ‘‘শৈশব খুব একটা সুখের ছিল না। ছোট বয়স থেকে বাবাকে কাছে পাইনি। মামার বাড়িতেই কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার তিন মাস পর লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। তার পর তো বিয়ে হল। ছেলে-মেয়েকে বড় করতে হয়। তারই মধ্যে ২০১০ সাল বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজে যোগ দিই।’’ তাঁর সংযোজন,“সংসার, আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলেও যে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় এই অনুপ্রেরণা মেয়ের কাছে পেয়েছি। পাশ করব প্রত্যাশা ছিল। সেটাই হয়েছে। এর পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে আছে।’’

পারভেজ বলেন, ‘‘বোন ও বাবার অনুপ্রেরণায় আবার লেখাপড়া জীবনে ফিরে এলাম। আসলে অনটন পরিবারের নিত্য সঙ্গী ছিল। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত কোনও কাজে যোগ দিয়ে আমায় উপার্জন করতে হবে। নয়তো আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে। তাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে লেখাপড়া ছাড়ি। তার পর মুম্বই গিয়েছিলাম। কিন্তু লেখাপড়া ছাড়ার আক্ষেপ ছিলই। সেটা এ বার দূর হল।’’

স্ত্রী ও ছেলের সাফল্যে প্রচণ্ড খুশি সাইফুল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলে ও স্ত্রী সত্যিই দৃষ্টান্ত তৈরি করল।’’

আর স্কুলের প্রধানশিক্ষক তোরাব আলির প্রতিক্রিয়া,“যাঁরা লেখাপড়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি তাঁরা যদি এই মা ও ছেলেকে দেখে অনুপ্রাণিত হন তাহলে সমাজ উন্নত হবে। এঁরা প্রকৃত অর্থে নজির তৈরি করলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik 2023 Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy