বর্ধমান পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
দিন তিনেক আগে দুপুরে একটি অনুষ্ঠান সেরে জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বসেছিলেন দলীয় কার্যালয়ে। হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ঢোকেন বর্ধমান শহরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সনৎ বক্সী। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘দিদিকে বলো অনুষ্ঠান হচ্ছে। বিধায়ক যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের ডাকা হচ্ছে না। নিচুস্তরে ভোটটা তো আমরাই করি।’’
ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল মঙ্গলবার সকালেও। শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ওই কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। কর্মসূচির মাঝেই তাঁকে কেন ডাকা হয়নি তা নিয়ে রাস্তায় অনুগামীদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ওই এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিম। তিনি বলতে থাকেন, ‘জান-প্রাণ দিয়ে ভোট করব আমরা। জেতাব আমরা। আর বিধায়ক আমাদের না জানিয়েই এলাকায় ঘুরবেন!’’
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে জেলা জুড়েই দেখা যাচ্ছে এমন ছবি। তৃণমূলের নিচুস্তরে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। কোথাও কোথাও ঘটছে বহিঃপ্রকাশ। যদিও দলের নেতৃত্বের দাবি, বিধায়কের সঙ্গে কারা যাবেন, তা দলের উপরতলা থেকে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে নজরদারিও চলছে। এটা নিয়ে ক্ষোভ দেখানোর কোনও মানে হয় না। রবিরঞ্জনবাবুও এ দিন বলেন, ‘‘পুরোটাই দলের নির্দেশে হচ্ছে। যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাঁদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া বাড়িগুলিতে গেলে বাসিন্দারা তো মুখই খুলবেন না! মানুষজনের কথা জানতে না পারলে ঠিক ভাবে রিপোর্ট কলকাতায় পাঠাব কী করে।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যদের বাদ দিয়েই এই কর্মসূচি করার জন্য ‘পিকে টিমে’র নির্দেশ রয়েছে। বিধায়কের সঙ্গে কারা যাবেন, কোন এলাকার কোন, কোন বাড়িতে যেতে হবে, রাতে থাকতে হবে কি না সবই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে কী কী প্রশ্ন করতে হবে, সে তালিকাও পাঠাচ্ছে পিকে-টিম। ফলে চাইলেও এলাকার নেতাদের কিছু জানাতে পারছেন না বিধায়কেরা। জেলার একাধিক বিধায়কের দাবি, নিচুস্তরের নেতা-কর্মীদের আচার-আচরণ, ‘কাটমানি’, এমনকি ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগের কথা যাতে তাঁরা খোলা মনে বলতে পারেন, সে জন্যই এই দল তৈরি করা। অনেক সময় বিধায়কদের একাও কথা বলার জন্য বলা হচ্ছে। আবার জেলার অনেক জায়গাতে বিধায়কের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন সাধারণ মানুষ।
মেমারি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘তিন-চার জনকে নিয়ে পুরো বিষয়টা ঠিক করা হচ্ছে। কী হতে চলেছে, দলের কী নির্দেশ আমরা কিছুই জানতে পারছি না। রাজ্যের কাছেও এ নিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।’’ রায়না ১ ব্লক সভাপতি শৈলেন সাঁইয়েরও দাবি, ‘‘পদে পদে সমন্বয়ের অভাব ঘটছে, অথছ সমন্বয় করাতেই এই কর্মসূচি।’’ ভাতার, গলসি, আউশগ্রাম থেকেও উঠে আসছে ক্ষোভের ছবি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের ঘটনার পরে কিছুটা বদল এসেছে। দলের উপরতাল থেকে সমন্বয় করার নির্দেশ এসেছে বিধায়কদের কাছে। ব্লক সভাপতিদের জানিয়ে তাঁরা কর্মসূচি করতে যাবেন বলেও জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy