দুর্গাপুরে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির সাংসদ, বিধায়কের নামে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার পড়ল দুর্গাপুরের ডিটিপিএস এলাকায়। সেখানে বেশ কিছু দিন ধরেই বস্তিবাসী পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। বিজেপি যদিও এর পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে। তৃণমূল তা আমল দেয়নি।
দুর্গাপুরের দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) এবং দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশনে (ডিটিপিএস) সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডিএসপি প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দার নামে দখলের অভিযোগ তুলে জায়গা ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছে। পুনর্বাসনের দাবিতে বাসিন্দারা আন্দোলন করছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একই কারণ ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষও কয়েক হাজার বাসিন্দার বিরুদ্ধে উচ্ছেদের নোটিস জারি করেছেন। নোটিস পাওয়া বাসিন্দারা পুনর্বাসনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন। তবে সেখানে সাংসদকে এখনও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই সংবাদমাধ্যমের একাংশের সামনে দাবি করেছিলেন, ‘‘কারখানা হতে হবে। তবে ডিএসপি, ডিটিপিএস কোথাও উচ্ছেদ করা যাবে না। রাজ্য সরকার জমি দিক। কেন্দ্র বাড়ি তৈরি করে দেবে।’’ মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, ডিটিপিএস এলাকায় সাংসদ ও বিধায়ক, দু’জনের নামেই ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার পড়েছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিধায়ককে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেলেও সাংসদকে সে ভাবে দেখা যায় না। করোনা-কালেও তাঁকে দুর্গাপুরে দেখা যায়নি। ২০২০ সালে তাঁর নামে কোকআভেন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তৃণমূল কর্মীরা। সেই বছর অক্টোবরে ডিএসপি কারখানা এবং ডিএসপি টাউনশিপের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ছবি-সহ ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার পড়ে। সিপিএমের তরফে ‘সাংসদের খোঁজে’ ২২ হাজার পোস্টকার্ড পাঠানো হয় দিল্লির বাসভবনের ঠিকানায়। যদিও সুরেন্দ্র বরাবর দাবি করেছেন, সাংসদ হিসেবে তাঁর যা ভূমিকা, তা তিনি যথাযথ পালন করেন। করোনার সময়েও তা করেছেন। ডিটিপিএস এলাকায় এমন পোস্টার পড়া নিয়েও তিনি বিচলিত নন বলে দাবি সুরেন্দ্রর।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এনআইটি) প্রায় ৯৬ কোটি ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১১ তলা গবেষণাগার এবং দেড় হাজার আসনের প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন করেন মঙ্গলবার। এনআইটিতে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন সুরেন্দ্র। পোস্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার নম্বর সবার জন্য প্রকাশ করা আছে। যে কেউ সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। ডিএসপির ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের প্রতিনিধিরা আমার সঙ্গে দেখা করে সমস্যা জানান। কিন্তু ডিটিপিএসের ক্ষেত্রে কেউ যোগাযোগ করেননি।’’
সাংসদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে দরবার করে বন্ধ ডিটিপিএসে আধুনিক ‘আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল’ নতুন ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিট স্থাপনের অনুমোদন তিনি করিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বহু কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার আর্থিক উন্নতি হবে। তাঁর দাবি, ‘‘দুঃখের বিষয়, তৃণমূলের নেতারা স্থানীয়দের উস্কানি দিয়ে সিঙ্গুরের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন। সেখানকার তিনটি কমিটির কাউকে তৃণমূল নেতারা আমার সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না।’’ সম্প্রতি ওই এলাকায় একটি সঙ্কীর্তনে গিয়েছিলেন জানিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘লোকসভা নির্বাচন সামনে। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টার দেওয়া হয়েছে।’’ বিধায়ক লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘কর্মহীনদের টাকা দিয়ে চক্রান্ত করে এ সব কাজ করাচ্ছে তৃণমূল।’’
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভোটের সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেন ওঁরা। কিন্তু ভোট পেরোলে আর দেখা মেলে না। তাই মানুষ ওঁদের ‘নিখোঁজ’ বলছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের কটাক্ষ, ‘‘লোকসভা ভোটে ফের প্রার্থী হওয়ার জন্য সম্প্রতি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তা আটকাতে বিজেপির অন্য গোষ্ঠীই পোস্টার সেঁটেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy