বাস না পেয়ে অটো ধরতে যাচ্ছেন এক যাত্রী। সোমবার দুর্গাপুরে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: বিশ্বনাথ মশান
আসানসোল মহকুমার একেবারে উল্টো ছবি ধরা পড়ল দুর্গাপুর মহকুমায়। সোমবার কোনও মিনিবাসই চলল না দুর্গাপুরে। বড় বাসও চলেছে হাতেগোনা। ফলে, যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। তবে আজ, মঙ্গলবার থেকে কয়েকটি করে মিনিবাস বিভিন্ন রুটে নামবে বলে জানিয়েছেন মালিকেরা।
জেলার বিভিন্ন রুটে বড় বাস প্রায় ৪০০ ও মিনিবাস প্রায় ৭০০টি চলে। তার মধ্যে দুর্গাপুর মহকুমায় প্রায় আড়াইশো মিনিবাস চলাচল করে বিভিন্ন রুটে। করোনা-পরিস্থিতির জেরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র বসার আসনে যাত্রী নিয়ে মিনিবাস চালানো যাবে। দাঁড়িয়ে কোনও যাত্রী যাবেন না, এমনই নির্দেশিকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সে জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি রয়েছে মিনিবাস মালিকদের। তাঁদের দাবি, মিনিবাসে আসন সংখ্যা ২৮। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি মিনিবাসে সর্বোচ্চ ২৮ জন যাত্রী উঠতে পারবেন। কিন্তু, সব সময় যে, সব আসনে যাত্রী থাকবেন এমন নয়। আবার, সব বাসে যে ২৮ জন যাত্রী হবেন সে নিশ্চয়তা নেই। ফলে, তেলের দাম, কর্মীদের বেতন, যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ, কাগজপত্র বাবদ যা খরচ হবে, এই নির্দেশিকা মেনে তা কোনও ভাবেই মিনিবাস চালিয়ে পোষাবে না বলে দাবি তাঁদের। বিকল্প হিসেবে বাসকর্মীদের বেতন, জ্বালানি তেলের খরচ দিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন মিনিবাস মালিকেরা। সে দাবি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও রাজ্য সরকার জানায়নি।
সোমবার মিনিবাস না চলায় সমস্যায় পড়ে যান যাত্রীরা। দীর্ঘদিন পরে এ দিন পুরসভায় পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। নানা প্রয়োজনে বহু মানুষ পুরসভায় এসেছিলেন। মিনিবাস না চলায় কেউ অটো, কেউ টোটো ভাড়া করে আসতে বাধ্য হন। ধোবিঘাট এলাকার বাসিন্দা পুষ্পা রুইদাস বলেন, ‘‘মিনিবাস চললে কম খরচে সহজে পুরসভায় আসা যায়। কিন্তু তা না চলায় টোটো ভাড়া করে আসতে হয়।’’ মিনিবাস না চলায় সিটি সেন্টারে আসতে সমস্যায় পড়ে যান ডিএসপি টাউনশিপের বি-জ়োনের অফিসযাত্রী স্বরাজ পাল। তিনি বলেন, ‘‘ফোন করে অটো ডেকে তার পরে অফিসে যাই।’’
মিনিবাস মালিকেরা জানান, আজ, মঙ্গলবার থেকে মহকুমার সব রুটেই কয়েকটি করে মিনিবাস চালানো শুরু হবে। দুর্গাপুরে মিনিবাস মালিকদের অন্যতম সংগঠন ‘দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কাজল দে জানান, প্রশাসনের তরফে মিনিবাস ও বাসস্ট্যান্ডগুলি জীবাণুমুক্ত করে দেওয়া, মিনিবাস কর্মীদের হাতশুদ্ধি, ‘মাস্ক’ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ দিন বিকেল পর্যন্ত তা এসে পৌঁছয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা নিয়ে মিনিবাস রাস্তায় নামাতে পরিকল্পনা করছি। তবে ভাড়া না বাড়ালে কতদিন চালানো যাবে জানি না।’’ অন্য একটি সংগঠন ‘দুর্গাপুর মিনিবাস অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাড়া বাড়ানো বা সরকারের তরফে বিকল্প সহযোগিতা ছাড়া, দীর্ঘদিন মিনিবাস চালানো সম্ভব নয়।’’
বড় বাসও সে ভাবে এ দিন নামেনি দুর্গাপুরে। বাঁকুড়া থেকে কিছু বাস দুর্গাপুরে আসে বলে জানান বাসকর্মীদের আইএনটিইউসি সংগঠনের নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বাসকর্মীদের উপযুক্ত কিট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং তাঁদের জীবনবিমা করিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি রাজ্য সরকারের কাছে।’’
দুর্গাপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক মৃণাল দত্ত বলেন, ‘‘মিনিবাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকে রাস্তায় মিনিবাস নামানোর আর্জি জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy