বাঁ দিক থেকে, ভাতার ব্লক অফিসে সিপিএমের মনোনয়ন জমা। নিজস্ব চিত্র
ফর্ম পেতেই বেজে যায় সওয়া ৩টে। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমার প্রথম দিনে এমনই অভিযোগ উঠেছে জেলায়। বিরোধীদের দাবি, প্রশাসনিক প্রস্তুতির আগেই মনোনয়নের দিন ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই অব্যবস্থা। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা দাবি করেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো এ দিন মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্লকে। কোথাও অব্যবস্থা, গোলমালের অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে নিশ্চিত ভাবে খতিয়ে দেখা হবে।’’
রায়নায় মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে বিজেপি। যদিও রায়না ১-এর বিডিও রিমলি সোরেনের দাবি, তাঁর দফতরে এমন কোনও ঘটনা হয়নি। বিজেপির দাবি, রায়না ১ ব্লকে সকাল ১১টা নাগাদ সর্বদলীয় বৈঠক ছিল। তারপরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ২০ জন হাজির হন ব্লকে। কিন্তু নির্দিষ্ট কর্মীরা ছিলেন না। অভিযোগ, বেলা ২টো নাগাদ মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু হতেই ২০-২৫ জনের একটি দল ব্লক অফিসে ঢুকে পড়ে। বিজেপির বর্ধমানের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মানিক রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমাকে মারতে মারতে ব্লক দফতর থেকে অনেক দূরে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। আমাদের এক প্রার্থীকে নর্দমায় ফেলে মারা হয়। প্রথম দিনেই এই পরিস্থিতি! এরপরে কী হবে, কে জানে।’’ যদিও রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারার দাবি, ‘‘কোনও ঘটনা হয়নি। প্রথম দিন থেকেই মিথ্যা অভিযোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। আসলে প্রার্থী পাবে না জেনেই অপপ্রচার করা হচ্ছে।’’
কালনা ১ ব্লকের আটঘোরিয়া-সিমলন পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা বিমল সিংহ রায়ের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের ২২টি আসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ফর্ম পেতেই সময় পেরিয়ে যায়। যদিও জেলার আর কোথাও শাসক দলের তরফে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের ওই ব্লক সভাপতি শান্তি চালের দাবি, ‘‘কেউ মনোনয়ন তুলতেই পারেন। তবে দলীয় প্রতীক এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি।’’
এ দিন সকাল থেকে ব্লক অফিসগুলিতে পরিকাঠামো তৈরি করতে দেখা যায়। বাঁশের গেট তৈরি, কোথায় আবেদনকারীরা অর্থ জমা দেবেন, ফর্ম তুলবেন, ফর্ম জমা দেবেন তা নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় ফ্লেক্স টাঙিয়ে। বেলা বাড়তেই ব্লকগুলিতে বসে সর্বদলীয় বৈঠক। ভোটকর্মীরা কী ভাবে কাজ করবেন, সেই প্রশিক্ষণও হয়। বিজেপির দাবি, ভোট ঘোষণার পরের দিন থেকে মনোনয়ন তোলা, জমার প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার নির্দেশে প্রশাসন নিজেদের তৈরি করতে সময় পায়নি। ফলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর জন্য আলাদা আর একটা দিন সময় দেওয়া উচিত ছিল। দলের কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমবার রাজ্য থেকে জেলা পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।’’ প্রায় ১৬০০ বুথে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যমাত্র রয়েছে বলেও জানান তিনি। যদিও তৃণমূল নেতা দেবু টুডুর দাবি, ‘‘বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থা যা তাতে ওরা অর্ধেক আসনেও প্রার্থী দিতে পারবে না।’’
কালনার মহকুমাশাসক সুরেশকুমার জগৎ জানিয়েছেন, শুরুর দিন কিছু কিছু সমস্যা হয়েছে ঠিকই। তবে মনোনয়ন জমা, তোলার প্রক্রিয়ার পরিকাঠামো সব ব্লকেই তৈরি করা হয়েছে। কালনা ১ ব্লকে কেন অনেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারলেন না, তা দেখা হচ্ছে।
আউশগ্রাম ২ ব্লকে প্রথম দিনে বিজেপির তিনটি, সিপিএমের তিনটি ও নির্দলে দু’টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। ভাতারে দশটি পঞ্চায়েত ও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, জানান বাম নেতা নজরুল হক। বিজেপি যুব নেতা সৌমেন কার্ফার দাবি, তাঁরা পঞ্চায়েতের একটি আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। মন্তেশ্বরেও তিনটি মনোনয়ন দিয়েছে বিজেপি। কেতুগ্রাম ২ ব্লকে সিপিএমের কয়েক জন মনোনয়ন দেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, “কেতুগ্রাম ২ ব্লক অফিসে আমাদের প্রার্থীরা দল বেঁধে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন থেকে প্রথমে ফর্ম দিতে পারেনি। তাই ফিরে আসতে হয়েছে। পরে আবার অল্প কয়েক জন গিয়ে মনোনয়ন দেন। কাটোয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে।” মহকুমাশাসক (কাটোয়া) মহকুমাশাসক অর্চনা পন্ধরিনাথ ওয়াংখেড়ে বলেন, “মনোনয়নের জন্য ফর্ম আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ছিল। জেলা থেকে পাঠানো হয়েছে। আসতে যেটুকু সময় লেগেছে মাত্র।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সব রকম প্রস্তুতি সেরে রেখেছি। দলের নির্দেশ মেনে ঠিক সময়ে মনোনয়ন দেবেন প্রার্থীরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy