প্রতীকী ছবি।
নাম রয়েছে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে। এর আগে চেকের মাধ্যমে সরকারি সাহায্যের টাকাও নিয়েছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এর ক্ষতিপূরণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতেই পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৪৮ হাজার উপভোক্তা বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, দাবি কৃষি দফতর সূত্রে। বিরোধীদের বক্তব্য, এত দিন নিয়মের ফাঁক গলে চাষে সরকারি অনুদান পেয়ে এসেছেন সম্পন্ন কিছু লোক, তা এ ঘটনা থেকেই পরিষ্কার। প্রান্তিক চাষিরা সরকারের কাছে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে আমন মরসুমের কিস্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। যেহেতু, ‘আমপান’-এ চাষের বেশ ক্ষতি হয়েছে, তাই এ মরসুমের প্রাপ্য কিস্তির সঙ্গে এক হাজার টাকা করে বেশি দেওয়া হচ্ছে। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা এখনও কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আমপানের জন্য ক্ষতিপূরণ পাননি, ব্লক কৃষি দফতর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফোনে না পেলে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ডেকে আনছেন কর্মীরা।’’ বিভিন্ন ব্লকের কৃষি দফতরের আধিকারিকদের দাবি, এত কিছুর পরেও অনেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বিশেষত, যাঁদের বড় ব্যবসা রয়েছে বা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মধ্যে এই অনীহা দেখা যাচ্ছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ‘আমপান’-এর জন্য জেলায় ১৫টি ব্লকের ১,৩৫৬টি মৌজায় ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন নোটিস দিয়েছে। সেখানে ৪২ হাজার হেক্টর জমির বোরো, ১৮ হাজার হেক্টর জমির তিল ও অন্য ফসল মিলিয়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ক্ষতি হয়েছে। মোট ১,৭৫,৮৮৮ জন চাষির নাম ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার জন ক্ষতিপূরণ বাবদ অতিরিক্ত এক কিস্তির টাকা পেয়েছেন।
চেক নেওয়ার সময়ে লাইনে দাঁড়ালেও বাকি প্রায় ৪৮ হাজার উপভোক্তা এখন ব্যাঙ্কের তথ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না কেন? নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্লক কৃষি আধিকারিক দাবি করেন, ‘‘চেক পেয়ে কোনও অ্যাকাউন্টে তা ভাঙিয়ে নেওয়া গিয়েছে। কিন্তু অনেক অ্যাকাউন্টে ‘কেওয়াইসি’ দেওয়া নেই বা প্রয়োজনীয় ব্যালান্স নেই। অ্যাকাউন্টগুলি কার্যকর নয় বলে সরাসরি অনুদান অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না। যে কোনও কারণে জমি মালিকদের একাংশ অ্যাকাউন্টগুলি কার্যকর করতেও চাইছেন না।’’
জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (কৃষি, সেচ ও সমবায়) মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘‘সমস্যা কাটিয়ে বাকি জমির মালিকেরাও চলতি মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ ছাড়া, অনেক অ্যাকাউন্টের তথ্যে গরমিল রয়েছে। আবার অ্যাকাউন্ট নম্বর ‘আপলোড’ করতে গিয়ে ভুল নম্বর দেওয়ায় অনেক চাষি বা জমির মালিক ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে জানা গিয়েছে।
বামপন্থী কৃষক সংগঠন ‘কৃষকসভা’র জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘নিয়মের ফাঁক গলে সম্পন্ন ব্যক্তিরা সরকারের আর্থিক অনুদান পেয়েছেন। সরাসরি ব্যাঙ্কে টাকা দিতেই বিষয়টি নজরে এসেছে। অর্থাৎ, সরকারের কাছে প্রান্তিক চাষিরা সেই ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছেন।’’ তৃণমূলের কিসান খেতমজুর কমিটির জেলা সভাপতি তথা কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ যদিও বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সব জমির মালিক সরকারের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। কোথাও গোলমাল থাকলে, প্রশাসন দেখছে।’’
ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে ঠিকা চাষি, প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। জেলা প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নাম থাকলে তবেই ‘আমপান’-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ বাড়তি অর্থ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। ওই প্রকল্পে নাম তুলতে জমির দলিল, পরচা থাকা বাধ্যতামূলক। পূর্ব বর্ধমানের ঠিকা বা প্রান্তিক চাষিদের তা নেই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘সমস্যাটি শুধু এই জেলায় নয়। গোটা রাজ্যের। এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy