এই ঝোপেই পড়ে ছিল শিশুটি। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ বছরের ছেলেটাকে ‘অপহরণে’র খবর আসার পর থেকে এক মুহূর্তও বাবার সঙ্গ ছাড়েননি তিনি। দিনভর ছোটাছুটি, মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসা এমনকি, মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দুর্গাপুর যাওয়ার জন্যও তৈরি হয়েছিলেন ওই গাড়ি চালক। তার মধ্যেই খবর আসে পাশের কাঁদসোনা গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে শক্তিগড়ের ওই ল্যাংচা ব্যবসায়ীর শিশুপুত্র। ছেলেটিকে আনতে গিয়েই ‘ফেঁসে’ যান তিনি। পরে অপহরণে অভিযুক্ত হিসেবে বছর একুশের ওই চালক, জামালপুরের চৎখণ্ডজাদি গ্রামের বাসিন্দা শেখ জামির হোসেন ওরফে রাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অপহরণ কাণ্ডের তদন্তে নেমে শক্তিগড় থেকে শেখ রবিউল নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই জামিরের নাম পাওয়া গিয়েছে। মাদক পাচারের অভিযোগে আগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।’’ এ দিন শক্তিগড়ের সিনেমাতলার শেখ রবিউলকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে তিন দিন পুলিশ হেফাজত হয়।
রবিবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ী বলিরাম ওঝার পাঁচ বছরের ছেলে। দোকানের সিসিটিভিতে দেখা যায়, অদূরে দাঁড়ানো দুটি লাল রঙের গাড়ির একটিতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অভিযোগ, বেলা ৩টে ১০ মিনিট নাগাদ ফোন করে হিন্দিতে বলা হয়, ‘ছেলেকে ফেরত পেতে চাইলে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। গাড়ির চালকের মাধ্যমে ওই টাকা দুর্গাপুরে পৌঁছে দিতে হবে।’ রাজি হয়ে যান ওই ব্যবসায়ী। যাওয়ার সময় বিকেল ৫টা নাগাদ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ল্যাংচার দোকান থেকে খবর আসে, কাঁদোসোনা গ্রামে দিঘির পাড়ের ঝোপে ছেলেটিকে পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশের দাবি, ছেলেটিকে আনতে গিয়েই সন্দেহভাজন হন জামির। গ্রামবাসী ঘিরে ধরতেই ল্যাংচা দোকানের কাছে গাড়িটি রেখে গা-ঢাকা দেন তিনি। রাতে পালানোর সময় নিষিদ্ধ মাদক-সহ ধরা পড়ে যান। ওই গ্রামের যুবক বাদশা হাজরা, কৌশিক হাজরা, বিজয় দাসদের কথায়, “আমাদের শিশুটি জানিয়েছিল, ‘ড্রাইভার আঙ্কল’ তাকে রেখে দিয়ে গিয়েছে। ওই চালক শিশুটিকে নিতে এলে জিজ্ঞাসা করাতেই চুপসে যায় সে।’’ তাঁরা জানান, গ্রামের দিঘির পাড়ের কাঁটা ঝোপে পায়ে গামছা বাঁধা ও গলায় প্লাস্টিকের স্ট্রিপ দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পড়ে ছিল শিশুটি। গ্রামবাসী রতন দাসের দাবি, “আমি ছাগল চড়াচ্ছিলাম। দিঘির পাড়ে দুর্গা ছাতুর (মাশরুম) খোঁজে গিয়ে শিশুটিকে দেখতে পাই। চোখ বেরিয়ে আসছিল। মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। ভয় পেয়ে ভাইপোকে ডাকি।’’ ভাইপো কচি দাসের কথায়, “আমি ওকে কোলে নিয়ে আটচালায় গিয়ে শুইয়ে দিই। নতুন ব্লেড এনে গলার ফাঁস কেটে দিই। কিছুক্ষণ পর ছেলেটি উঠে বসে বলে ‘আন্টি জল খাব’।’’ স্থানীয় বধূ অঞ্জলি রুইদাস জল, বিস্কুট এনে দেন। তাঁর দাবি, খাওয়ার পরেই নাম, ঠিকানা বলে ছেলেটি।
এ দিন বাড়ির নীচে ল্যাংচার দোকানে বসে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘রাজকে সঙ্গে নিয়ে মহালয়ার সময় গাড়ি কিনেছি। কাজ দিয়েছি। ছেলে খোঁজার জন্য আমার সঙ্গে থানা, টোল প্লাজা ছুটোছুটি করেছে। আর সেই এত বড় ক্ষতি করে দিচ্ছিল, ভাবতে পারছি না।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছে, শিশুটি সুস্থ হলেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।
জেলা পুলিশের দাবি, মোবাইলের সূত্র ধরেই রবিউলকে ধরা হয়। শক্তিগড় থানার দাবি, জেরায় রবিউল জানিয়েছে, পুরনো গাড়ি কেনার জন্য জামির ল্যাংচা ব্যবসায়ীর কাছে ৩০ হাজার টাকা চেয়েছিল। তিনি না দেওয়ায় সুদে টাকা ধার নেয়। বাকি টাকা তোলার জন্যই শিশুটিকে অপহরণের ছক কষা হয়, দাবি পুলিশের। পুলিশের দাবি, জেরায় জামির জানায় একটি লাল রঙের গাড়িতে মালিকের শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। পুলিশ টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছে, ওই গাড়িটি কলকাতার দিকে যাচ্ছে।
কাঁদোসোনা গ্রামের বাসিন্দাদেরও দাবি, রবিবার দুপুরে রাজকে গাড়ি নিয়ে দ্রুত গতিতে যেতে দেখেন তাঁরা। কিন্তু অনেকেই নতুন গাড়ি নিয়ে পুজো দিতে আসেন বলে সন্দেহ হয়নি। পুলিশের ধারণা, বাড়ির গাড়িতেই ওই শিশুকে ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু দিয়ে অচেতন করে বেঁধে ঝোপে ফেলা দেওয়া হয়। আরও কেউ ঘটনায় জড়িয়ে থাকতে পারে, অনুমান পুলিশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy