পুলিশ ভ্যানে ধৃত পরিচারিকা পাপিয়া মাঝি। নিজস্ব চিত্র
বাজারে ডেবিট কার্ড হারিয়ে ফেলেছিলেন বৃদ্ধ। কয়েক দিন পরে ব্যাঙ্ক ‘স্টেটমেন্ট’ তুলে দেখেন পাঁচ দিনে ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। সোমবার রাতে টাকা হাতানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ওই বৃদ্ধের বাড়ির পরিচারিকাকেই।
পুলিশের দাবি, এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভাতার গ্রামের পাপিয়া মাঝিকে ধরা হয়েছে। পরপর পাঁচ দিন ভাতার বাজারের একই এটিএম থেকে পাঁচ জন আলাদা ব্যক্তির সাহায্যে ওই টাকা তুলেছেন তিনি। পুলিশ জানতে পেরেছে, হাতানো টাকা দিয়ে ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ, বন্ধক দেওয়া গয়না ছাড়ানো এমনকি, স্বামীর টোটোও সারিয়েছেন ওই মহিলা। মঙ্গলবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে চার দিন পুলিশ হেফাজত হয়।
পুলিশের দাবি, পাপিয়া জেরায় তাঁদের জানিয়েছেন, ভাতার বাজারে ওই ডেবিট কার্ডের প্যাকেটটি কুড়িয়ে পান তিনি। প্যাকেটের মধ্যে একটি কাগজে পিন নম্বর লেখা ছিল। তবে কার্ডের ব্যবহার না জানায় নানা ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে ওই টাকা তোলেন তিনি। পুলিশের দাবি, প্রথম চার দিন ২০ হাজার টাকা করে ও শেষ দিন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা তোলা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভাতারের সারদাপল্লির বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সনৎ পাঁজা ডেবিট কার্ড-সমেত একটি প্যাকেট ভাতার বাজারে হারিয়ে ফেলেন। তিন দিন পরে তিনি বুঝতে পারেন, কার্ডটি হারিয়ে গিয়েছে। তখনও তিনি পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জানানি। দশ দিন পরে ব্যাঙ্ক থেকে ‘স্টেটমেন্ট’ তুলতে গিয়ে দেখেন, তাঁর এটিএম ব্যবহার করে পাঁচ দিনে প্রায় এক লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। এর পরেই তিনি ভাতার থানা ও বর্ধমানের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
দু’টি থানা যৌথ তদন্তে নেমে প্রথমেই এটিএম-কাউন্টারের ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ জোগাড় করেন। সেখানে দেখা যায়, প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময়ে ভাতার বাজারের ভিতরে থাকা এটিএম থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। পাঁচ দিনে পাঁচ জন লোক ওই টাকা তুলছেন। আর তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ৩০-৩২ বছরের এক মহিলা। পুলিশ ওই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ওই মহিলা তাঁদের কার্ড ও সাদা কাগজে পিন নম্বর দিয়ে টাকা তুলে দেওয়ার জন্য সাহায্য চান। গ্রামের বাসিন্দা বলে তাঁরাও কোনও প্রশ্ন না রেখে টাকা তুলে দিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই পুলিশ পৌঁছে যায় পাপিয়াদেবীর কাছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই টাকা দিয়ে প্রথমেই একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ঋণের বাকি থাকা কিস্তির ১৮ হাজার টাকা শোধ করেন ধৃত মহিলা। বাকি টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বন্ধক থাকা গয়না ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। টোটো ভেঙে যাওয়ায় স্বামী কাজে যেতে পারছিলেন না বলে দশ হাজার টাকা দিয়ে টোটো সারানোরও ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও জামাকাপড়, শীতবস্ত্র-সহ অন্যান্য কাজের জন্যও বেশ কিছু টাকা খরচ করেছেন তিনি। তার পরেও পুলিশ পাপিয়াদেবীর কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।
ভাতার থানার এক আধিকারিক প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সনৎবাবুর বাড়িতেই ধৃত মহিলা কাজ করতেন। এটিএম কার্ডটি সনৎবাবুরই, এটা জানার পরে ভয় পেয়ে ওই মহিলা কার্ডটি পুকুরের জলে ফেলে দেন। ওই কার্ড খুঁজে বার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy