Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
TMC in Urban Areas

বড় ভোটে জয়, তবু শহরে পিছিয়ে

তৃণমূল শিবিরের দাবি, ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকার কয়েকটি প্রাথমিক কারণ নজরে এসেছে। বর্ধমান শহরে পুর পরিষেবার হাল নিয়ে ভোটের আগেই দলীয় বৈঠকে একাধিক কাউন্সিলর সরব হয়েছিলেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

শহরের মন পেতে হোঁচট খাচ্ছে তৃণমূল। গত লোকসভায় বর্ধমান শহরের (বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভাও) ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বারও ২০টিতে পিছিয়ে রয়েছে ঘাসফুল।

বিরোধীশূন্য এই পুরসভায় লোকসভার ফলাফলের নিরিখে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে পুরপ্রধানের দু’টি ওয়ার্ড-সহ একাধিক চেয়ারম্যান-ইন কাউন্সিলের ওয়ার্ডে। তবে গত বিধানসভায় পিছিয়ে থাকা বিধায়ক খোকন দাসের দু’টি ওয়ার্ড শুধু পুনরুদ্ধার নয়, বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে তৃণমূল। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি রাসবিহারী হালদারের নজরদারিতে থাকা দু’টি ওয়ার্ডেও জিতেছেন কীর্তি আজাদ।

গত লোকসভায় বর্ধমান শহরের মোট ফলাফলে ১৩৩৮ ভোটে জিতলেও ২১টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ওয়ার্ড-ভিত্তিক ফলে একই ধারা বজায় থাকে বিধানসভাতেও। ৮১০৫ ভোটে জিতে খোকন দাস বিধায়ক হলেও ১৮টি ওয়ার্ড হেরে যায় তৃণমূল। খোকনের দখলে থাকা একটি ওয়ার্ডেও পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বারও বিধানসভাভিত্তিক ফলাফলে ৭২৮৮ ভোটে তৃণমূল জিতেছে। কিন্তু পুরসভার অধিকাংশ হাতছাড়া হয়েছে।

২০১৩ সাল থেকেই বর্ধমান পুরসভা বিরোধীশূন্য। তার পরেও বার বার লোকসভা, বিধানসভার মতো বড় ভোটে দলের ওয়ার্ড-ভিত্তিক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়া চিন্তায় ফেলেছে তৃণমূলকে। আবার পদ্ম-শিবিরের ভাবনা, বেশির ভাগ পুর শহরে দল জিতলেও মোট ভোটে পিছিয়ে পড়ছে। দু’টি দলই অন্তর্তদন্ত শুরু করেছে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার দাবি, “বর্ধমান শহরে তৃণমূলের খেলা আমরা ধরতেই পারিনি। কয়েকটি জায়গায় অভিযোগ পেয়ে প্রার্থী গেলেও কোন পদ্ধতিতে খেলা হচ্ছে ধরা যায়নি।”

তৃণমূল শিবিরের দাবি, ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকার কয়েকটি প্রাথমিক কারণ নজরে এসেছে। বর্ধমান শহরে পুর পরিষেবার হাল নিয়ে ভোটের আগেই দলীয় বৈঠকে একাধিক কাউন্সিলর সরব হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, শহরের পরিষেবা, রাস্তার হাল না ফিরলে ওয়ার্ডে জেতা কঠিন হবে। ফল বেরনোর পরে এক কাউন্সিলরের দাবি, “যে সব ওয়ার্ডে পুর পরিষেবা বেহাল, সেখানে দলের হার আটকানো যায়নি। বিশেষ করে, রাস্তা-নিকাশি নিয়ে শহরবাসী খুবই ক্ষুব্ধ।” যদিও জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “পুর পরিষেবা দিয়ে লোকসভা ভোট হয় না। যে সব ওয়ার্ডে কাউন্সিলরেরা সক্রিয় ছিলেন না, সেখানে দল হেরেছে।’’

বিধায়ক খোকন তাঁর হাতে থাকা দু’টি ওয়ার্ডে দলকে জেতাতে পুরভোটের মতোই বাড়ি বাড়ি প্রচার করেন। ফলও মেলে। গত বিধানসভায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৮৮ ভোটে জয় আর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৫৭৭ ভোটে হেরেছিল তৃণমূল। এ বার ওই দু’টি ওয়ার্ড থেকে ১৫৯৬ ও ১৬৯৯ ভোটে তৃণমূল জিতেছে। আড়াই-তিন হাজারের কাছাকাছি ব্যবধানে জয় এসেছে ১৯, ৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডেও। পুরপ্রধান পরেশ সরকারের বাড়ি ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে তৃণমূল হেরেছে। আবার তিনি পুরভোটে জিতেছিলেন যে ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে, সেখানেও তৃণমূল ১৭২৮ ভোটে হেরেছে। বর্ধমান শহর তৃণমূলের সভাপতি তন্ময় সিংহ রায় বলেন, “প্রতিটি ভোটের প্রেক্ষিত আলাদা। ভোটাররা স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ করেন বলে পৃথক ফল হয়েছে। তবে বার বার কেন বেশির ভাগ ওয়ার্ডে হারছি, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি।’’

বিজেপি শিবিরের দাবি, ইছলাবাদ-নীলপুর এলাকার মধ্যে থাকা ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সতেরোশো থেকে উনিশশো ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে দল। ‘সাসপেন্ড’ হয়ে থাকা বিজেপি নেতা শ্যামল রায়কে প্রার্থী দিলীপ ঘোষ মাঠে নামাতে পেরেছিলেন। ওই এলাকায় জয়ে তাঁরও ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া আলমগঞ্জ এলাকায় (২২ নম্বর ওয়ার্ড) গত লোকসভা ও বিধানসভার চেয়ে বিজেপি বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে (১৬০৮ ভোট)। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ের পিছনে পুর পরিষেবা একটা বড় কারণ। আর ইছলাবাদ ও নীলপুর বর্ধমান শহরে দলের ‘গড়’। বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, “আমরা বেশির ভাগ ওয়ার্ডে জিতলেও ব্যবধান কম ছিল। তবে কাঞ্চননগর-রথতলা কেন ধরে রাখতে পারলাম না, বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy