ধরে রাখা সাপ হাতে শিবেন্দ্রবাবু। নিজস্ব চিত্র
মাঝ রাতেও বেজে ওঠে ৭২ বছরের বৃদ্ধের ফোন। বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়েছে, ফোনের ও পার থেকে এমন খবর পেলেই নানা সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন তিনি। সাপ ধরার পরে, বন দফতরকে খবর দিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন সেটিকে। গত কয়েক দশক ধরে এই কাজ করে চলেছেন কালনা শহরের শ্যামরায়পাড়ার বাসিন্দা শিবেন্দ্রনারায়ণ সরকার। তিনি জানান, ‘লকডাউন’ চলাকালীন ধরেছেন ১৬টি সাপ। কিন্তু সেগুলিকে নিয়েই এখন চিন্তাই পড়েছেন বৃদ্ধ। তাঁর দাবি, এখন বন দফতরের কর্মীরা এসে পৌঁছতে পারছেন না। আবার, কোনও জায়গায় ঝোপ-জঙ্গলে সাপ ছাড়তে গেলে আশপাশের বাসিন্দারা বাধা দিচ্ছেন।
শ্যামরায়পাড়ার একতলা বাড়িতে থাকেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রাক্তন কর্মী শিবেন্দ্রবাবু। তাঁর বিছানার পাশেই থাকে সাপ ধরার নানা সরঞ্জাম। এলাকায় কোনও বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়লেই ডাক পড়ে তাঁর। প্রতিবেশীদের দাবি, সাহস ও অনুমান ক্ষমতার উপরে ভরসা রেখে অজস্র সাপ ধরেছেন তিনি। এমনকি, সাপের ছোবল খেয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। তবে তাতে সাপ ধরা বন্ধ হয়নি।
শিবেন্দ্রবাবু জানান, অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে এক বার একটি সাপ ধরার পরে, সেটি তাঁর হাতে পেঁচিয়ে যায়। যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় সেটিকে মেরে ফেলতে হয়েছিল। তাতে খুব অনুশোচনা হয়েছিল। তার পর থেকে বহু সাপ ধরলেও কোনওটিকে প্রাণে মারেননি তিনি। সেগুলিকে ধরে জারে ভরে ফেলেন। তার পরে তুলে দেন বন দফতরের হাতে।
শনিবার শিবেন্দ্রবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি জারে গোখরো ও চন্দ্রবোড়া রাখা আছে। জারের ভিতরেই ফণা তুলছে সাপগুলি। বৃদ্ধ জানান, শুক্রবার নিউমধুবন ও রামেশ্বরপুর এলাকা থেকে ধরেছেন এই দু’টিকে। তাঁর দাবি, গত এক বছরে গোটা আশি সাপ ধরেছেন। এর মধ্যে ‘লকডাউন’ চলাকালীন ধরেছেন ১৬টি। কিন্তু এই সময়ে উদ্ধার করা সাপেদের নিতে আসছেন না বনকর্মীরা। আশপাশের কোনও এলাকায় সাপ ছাড়তে গেলেই সেখানকার মানুষজন এসে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। অনেকে সাপ মেরে ফেলতে চাইছেন। সে কারণে এখন তিনি পড়েছেন বেশ মুশকিলে।
শিবেন্দ্রবাবুর কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল, জানান বন দফতরের কর্তারা। দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এখনও গণ পরিবহণ ব্যবস্থা সে ভাবে চালু হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই শিবেন্দ্রবাবুর ধরা সাপ আনা যাচ্ছে না।’’ তাঁর পরামর্শ, এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাড়ি থেকে ধরা সাপ জনবসতিহীন এলাকায় ছেড়ে দিতে পারেন শিবেন্দ্রবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy