Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Lockdown in West Bengal

লোকসানের আশঙ্কা, বাস নামল না পথে

মালিকদের একটি সংগঠনের দাবি, বাস চালাতে গিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১,৭০০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

দু’টি আসনের মাঝে প্লাস্টিক। বর্ধমানে একটি মিনিবাসে। ছবি: উদিত সিংহ

দু’টি আসনের মাঝে প্লাস্টিক। বর্ধমানে একটি মিনিবাসে। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০২:১৫
Share: Save:

ভাড়া বৃদ্ধি-সহ নানা দাবির সুরাহা না হওয়ায়, চলতি সপ্তাহের গোড়া থেকে বেসরকারি বাসের দেখা কার্যত মেলেনি রাস্তায়। রাজ্য স্তরে আলোচনার পরে, বৃহস্পতিবার থেকে বাস মালিকদের সংগঠন বাস চালানোর কথা জানিয়েছিল। জেলার সব স্ট্যান্ড থেকেই সমস্ত রুটের বাস চলবে, আশা করেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের যাত্রীরা। কিন্তু এ দিনও বর্ধমানের দু’টি স্ট্যান্ড থেকে গোটা তিনেকের বেশি বাস রাস্তায় নামল না। চাকা গড়াল না কাটোয়া ও কালনাতেও। জেলা বাস মালিক সমিতির দাবি, সোমবারের আগে জেলায় ২৫ শতাংশের বেশি বাসের চাকা গড়ানোর সম্ভাবনা কম।

বাস মালিকদের সূত্রে জানা যায়, যত আসন, তত যাত্রী— এই নিয়মের পরে জেলায় বাস চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সোমবার ৮৫টি বাস রাস্তায় নামে। যাত্রীদের অনেকে আশা করেছিলেন, ধীরে ধীরে বাসের সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু উল্টে, রাস্তায় বাস চলাচলই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চালকদের একটি বড় অংশের দাবি, বিশেষ যাত্রী মিলছে না। তার উপরে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে আসনের বেশি যাত্রী তোলার উপায় নেই। বাসে কর্মীদের জন্য ‘মাস্ক’, ‘স্যানিটাইজ়ার’ রাখতে হবে। বাসে নিয়মিত ভাবে জীবাণুনাশক ‘স্প্রে’ করতে হবে। সব মিলিয়ে, গাড়ি চালিয়ে লোকসান হবে মনে করে মালিকেরা বাস চালাতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।

জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক তুষার ঘোষ দাবি করেন, ‘‘কর্মীদের অনেকেও বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছেন। তা ছাড়া, আমাদের ব্যবসা অনেকটাই ট্রেন-নির্ভর। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হলে জ্বালানির খরচ তোলা কঠিন। তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য-বিধি মেনে, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বাস চালাতে মালিকদের বলা হয়েছে।’’

পূর্ব বর্ধমানে হাজারখানেক বেসরকারি বাস চলাচল করে। বৃহস্পতিবার বর্ধমান থেকে কালনা, কাটোয়া ও মুর্শিদাবাদের লালগোলা রুটের তিনটি বাস ছাড়ে। যাত্রীদের অনেকের আবার অভিযোগ, ওই সব বাসে সরকারি ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বিকল্প না থাকায় তা দিয়েই যেতে হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। যদিও বাস মালিক সংগঠন এই অভিযোগ মানতে চায়নি। সংগঠনের সম্পাদক জানকী সিংহের পাল্টা দাবি, ‘‘বাসগুলি বসে রয়েছে। অথচ, সরকার নানা রকম কর আদায় করছে। সে কর এই সময়ে মকুব করলে ভাড়া নিয়ে এত সমস্যা থাকত না। তা ছাড়া, করোনা-আবহে অনেক যাত্রীও রাস্তায় বেরোচ্ছেন না। তবে সোমবার থেকে জেলায় কিছু বাস নামবে বলে মনে করা হচ্ছে।’’

কাটোয়ার বাস মালিক সমিতির কর্তা নারায়ণচন্দ্র সেন দাবি করেন, ‘‘এক-একটি গাড়িতে জীবাণুনাশক ‘স্প্রে’ করতে ভাল টাকা খরচ হচ্ছে। এখন বাস মালিকদের ওই টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই। তাই সরকারের কাছে বাসগুলিতে জীবাণুনাশক ‘স্প্রে’ করার দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া, রাস্তায় যাতে অহেতুক হয়রান না হতে হয়, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে।’’

বর্ধমান শহরে বেশ কিছু মিনিবাস চলতে শুরু করেছে। তবে মালিকদের একটি সংগঠনের দাবি, বাস চালাতে গিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১,৭০০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নানা বাসে যাত্রীদের সুবিধার জন্যে দু’টি আসনের মাঝে প্লাস্টিকের চাদর রাখা হয়েছে। ওই সংগঠনের দাবি, তাতে যাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব বজায় থাকছে।

লোকসান সত্ত্বেও মিনিবাস চালানো যাচ্ছে কী ভাবে? মিনিবাস মালিকদের একটি সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একই বাস প্রতিদিন রাস্তায় নামছে না। পরিবর্তন করে চালানো হচ্ছে। ফলে, লোকসানের ভাগ সব মালিকদের মধ্যেই ভাগ হচ্ছে। তা ছাড়া, বাস চলছে—এই বার্তা পেলে আরও বেশি যাত্রী নিশ্চিন্তে রাস্তায় নামবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown in West Bengal Bus Service, Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE