বৃষ্টির জল থেকে কাঁচা ইট বাঁচানোর চেষ্টা। কাটোয়ার এক ইটভাটায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
একে বিক্রিবাট্টা নেই, তার উপরে বৃষ্টি। কাঁচা ইট পাকানোর কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লকডাউনের জেরে আটকে রয়েছেন ভিন্ জেলা ও অন্য রাজ্যের শ্রমিকেরা। তাঁরা এখন বাড়ি ফিরতে চাইছেন। আপাতত তাঁদের ফেরার উপায় নেই। এক দিকে আর্থিক ক্ষতি, অন্য দিকে শ্রমিকদের অসন্তোষ— দুই দিক সামাল দিতে তাঁরা বিপাকে পড়ছেন বলে অভিযোগ ইটভাটা মালিকদের একাংশের। সমস্যা দেখা দিয়েছে ভাটা খোলা রাখা নিয়েও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রের এক নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২০ এপ্রিল জেলার কয়েকটি ইটভাটা খুলেছিল। তবে বারবার বৃষ্টিতে ইট তৈরির কাজ আটকে যাওয়ায় সেগুলি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের নির্দেশ বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ভাটাগুলি কেন খোলা হয়েছিল, জেলাশাসক বিজয় ভারতী তা খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ইটভাটাগুলি খোলার অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারকে জেলা থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার উত্তর এখনও আসেনি। কয়েক দিন আগেই জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ইটভাটা খুলতে হবে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা ইটভাটা মালিকদের সংগঠনের দাবি, নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ইট তৈরির মরসুম। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ চলছে। শ্রমিকেরা বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করছে। ইট তৈরি করা গেলেও বিক্রি করা যাবে না। সে জন্য এখন আর কেউ ভাটা খুলতে উদ্যোগী হবেন না। সংগঠনের সভাপতি দুলেন্দ্রনাথ মিত্র দাবি করেন, ‘‘পুঁজিতে টান পড়তে শুরু করেছে। এর পরে কত জন ব্যবসা টানতে পারবেন, তা চিন্তার বিষয়।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে বর্ষায় চাষ-আবাদ করেন। ফিরতে না পেরে তাঁরা অস্থির হয়ে উঠছেন। তাঁদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইটভাটা চালানো সম্ভব নয়।’’
পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৩০৯টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ভাটায় কম করে ৭৫ জন শ্রমিক রয়েছেন। ‘লকডাউন’ শুরুর পর থেকেই ভাটা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই বাড়ি বিহার, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডের মতো নানা রাজ্যে। এ ছাড়া বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া থেকে অনেক শ্রমিক আসেন। প্রশাসনের নির্দেশে এই পরিস্থিতিতে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ভাটার মালিকদের করতে হচ্ছে। ওই সংগঠনের বর্ধমান সদরের সম্পাদক আর্শাদ হোসেন দাবি করেন, ‘‘মাসখানেক ধরে ওই শ্রমিকদের রাখতে আমরাও হিমসিম খাচ্ছি। প্রশাসন যদি ওঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেন, ভাল হয়।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০ এপ্রিল থেকে জেলার বেশ কিছু ভাটা খুলে কাঁচা ইট শুকোনোর কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝে-মধ্যেই বৃষ্টির জেরে কয়েক হাজার কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। কেতুগ্রামের চরখির ইটভাটার মালিক জহরলাল ঘোষ, কাটোয়ার গাজিপুরের সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়েরা অভিযোগ করেন, ‘‘বুলবুলের সময়ে ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। লকডাউন চলায় কোনও কাজ হয়নি। কয়েক দিন ধরে ইট শুকোতে দিতে গিয়ে বৃষ্টির ঘা পড়ল।’’ কাটোয়া মহকুমা ‘ব্রিক ফিল্ড অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি প্রলয় সিংহের বক্তব্য, ‘‘ইট বিক্রির অনুমতি দিলে ক্ষতি সামলানো যাবে।’’
প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ইট বিক্রি নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) শশীভূষণ চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘কোথায় কত শ্রমিক আটকে রয়েছেন, তার অডিট করানো হয়েছে। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে কোনও আবেদন আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy