স্কুল বন্ধ দেখে ছাত্রীদের জটলা। —নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন স্কুলের আটটি আলমারির চাবিও। তারপর থেকেই কার্যত অচলাবস্থা চলছে কালনা শহরের শশীবালা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র বের করতে না পারায় আটকে গিয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে শ’চারেক ছাত্রীর মিড-ডে মিল ও রান্নার কাজে নিযুক্ত কর্মীদের বেতনও। এরপরে মঙ্গলবার একটি বৈঠক করে পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, মিড-ডে মিল চালু না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু নোটিশের কথা না জানায় বুধবার এসে ফিরে যান বহু ছাত্রী। ক্ষোভ ছড়ায় অভিভাবকদের মধ্যেও। পরে অবশ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তালা খোলে।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে জুলাই মাস থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে পরিচালন সমিতির সংঘাত শুরু হয়।পরিচালন সমিতি দাবি করে, সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকার হিসেবে ২২ লক্ষ টাকার গড়মিল রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা স্নিগ্ধা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নানা স্তরে নালিশও জানায় স্কুল পরিচালন সমিতি। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। স্কুলে এসে তদন্ত করে থানায় প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগও করে তারা। এরপর ওই বছরের ২৮ জুলাই থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষিকা। পরে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি ফের কাজে যোগ দেন। এক মাস কাটতে না কাটতেই ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালন সমিতি মিড-ডে মিলে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষিকা-সহ দুই গ্রুপ ডি কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। কালনা থানা এই মামলা শুরু করে ৬ মার্চ। তার দুদিন আগে থেকেই অবশ॥ অভিযুক্ত তিন জন স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন।
পরিচালন সমিতির অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকা যাওয়ার আগে স্কুলের আটটি আলমারির চাবি নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। ফলে প্রয়োজনীয় নথিপত্র বের করতে না পারায় ব্যাঙ্ক থেকে মিড-ডে মিলের টাকা তোলা বন্ধ হয়ে যায়। থমকে যায় ৪০০ জন ছাত্রীকে মিড-ডে মিল খাওয়ানো এবং রান্নায় যুক্ত কর্মীদের বেতনও। বাধ্য হয়ে ৯ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় মিড-ডে মিল। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সমস্যার কথা প্রশাসনের আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়। তবে এরপরেও চাবি মেলেনি। মঙ্গলবার ফের পরিচালন সমিতির বৈঠক বসে। ঠিক হয়, মিড-ডে মিল চালু না হলে স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে। বিকেলে এ ব্যাপারে পরিচালন সমিতির তরফে একটি নোটিশও ঝোলানো হয়।
কিন্তু ততক্ষণে স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় নোটিশের কথা জানতে পারেননি ছাত্রী এবং শিক্ষিকারা। ফলে বুধবার স্কুলে এসে তাঁরা দেখেন মূল দরজায় তালা ঝুলছে। স্কুল না খোলায় বেশ কিছু ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশও করেন। শিক্ষিকাদের অনেকেও বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, স্কুলের ঝামেলার জেরে ক্ষতিগস্থ হচ্ছে ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ। অথচ প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থ্যা নেওয়া হচ্ছে না। বেলা ১২টা নাগাদ স্কুলে পৌঁছয় পুলিশ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তালা খুলেও দেওয়া হয়।
স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক চন্দন সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য স্কুলে আসার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ চন্দনবাবুর দাবি, স্কুল পরিচালন সমিতি ছাত্রীদের স্বার্থে, তাড়াতাড়ি মিড-ডে মিল চালু করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
পরে সন্ধ্যায় কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘‘ওই স্কুলের বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি সামনের মঙ্গলবার কালনায় আসছেন। সে দিনই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy