গলসির এই চালকল থেকে নোংরা জল খালে মেশার অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
কাগজকল থেকে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগে কারখানার গেটে ঘণ্টা তিনেক বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, কারখানার বর্জ্য, দূষিত জলে ক্ষতি হচ্ছে জমির, জলেও দূষণ ছড়াচ্ছে। আউশগ্রামের দেবশালা পঞ্চায়েতের ছোটরামচন্দ্রপুরের ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, বিক্ষোভ চলাকালীন কারখানার সামনের বাতি, ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরাভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে আসে ছোড়া ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। আজ, শনিবার ওই আলোচনা হওয়ার কথা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর পাঁচেক আগে ওই কাগজ কারখানাটি তৈরি হয় এলাকায়। বছর তিনেক আগে সেটি চালু হয়। তার পর থেকেই কারখানার দূষিত বর্জ্য জল এলাকার চাষের জমিতে পড়ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁদের দাবি, নোংরা জল কুনুর নদীতে মিশে দূষণ ছড়াচ্ছে। সেই জল পান করে রোগ ছড়াচ্ছে গবাদি পশুদের। এ ছাড়া দৈনন্দিন কাজেও কুনুরের জল ব্যবহার করা যাচ্ছে না, জানান তাঁরা। পাশাপাশি কারখানার ছাই উড়ে ভরে যাচ্ছে পুরো এলাকা।
দু’নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী পাকা রাস্তার উপরেই রয়েছে কারখানাটি। ওই রাস্তা দিয়ে আঢ়জুরি, ধানতোর, রাঙাখুলা এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। পড়ুয়ারাও স্কুল, কলেজে যাওয়ার জন্য ওই রাস্তা ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কারখানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পথচারী, সাইকেল ও বাইক আরোহীদের চোখে ছাই ঢুকে যাচ্ছে। ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটছে। শিশু, বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে বলেও তাঁদের দাবি। এ ছাড়া খেতে ছাই উড়ে পড়ায় ফসলে ক্ষতি হচ্ছে। কেউ তা কিনতে চাইছেন না বলে দাবি চাষিদের একাংশের। বিষয়টি নিয়ে বারবার কারখানা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও কাজ হয়নি দাবি ছোট্টু গড়াই, প্রশান্ত বাগদি, শান্তনু আঁকুড়ে, বুল্টি লোহারদের।
দূষণের জের
• শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, চর্মরোগ-সহ বহু রকমের রোগ হতে পারে।
• বর্তমানে বেশির ভাগ শিশু দূষণ সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভুগছে।
• প্রসূতিদের ক্ষেত্রেও মা ও শিশুর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ
হতে পারে।
• বায়ুদূষণ বেশি
এমন এলাকায় হাঁপানি, ফুসফুসে ক্যানসারের প্রবণতা খুব বেশি।
অশোক দত্ত ও উৎপল দাঁ, বর্ধমানের দুই চিকিৎসক
• কাগজকলগুলিতে সাধারণত সিন্থেটিক রঙ ব্যবহার করা হয়।
• এই ধরনের কল থেকে যে সমস্ত বর্জ্য নির্গত হয়, তার মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকে যা শরীরে গেলে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মাতে পারে, ক্যানসারও হতে পারে।
• এই উপাদান জলাশয় বা মাটিতে মিশে তা মাছ বা যে কোনও জলজ প্রাণীর শরীরে ঢুকে যায়। ফসলের মধ্যেও জমা থাকে।
• এ সব রাসায়নিক উপাদানে পুরো ‘ইকো-সিস্টেম’ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
নবকুমার মণ্ডল, পরিবেশ বিজ্ঞানী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
আউশগ্রামে কাগজকলের বর্জ্য জল। নিজস্ব চিত্র
যদিও অভিযোগ মানতে চাননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানার অন্যতম মালিক বিবেক বানকার দাবি, “দূষণ বিধি মেনেই কারখানা চালানো হয়। এই আন্দোলন রাজনৈতিক। এ ভাবে আন্দোলন হলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আন্দোলনের নামে কারখানার গেটের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরা এবং বাতি ভাঙচুর করা হয়েছে।’’ যদিও পুলিশের দাবি, এ নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি।
চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
আউশগ্রাম ২ ব্লক প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছ, আগামী বুধবার মালিক পক্ষ, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্লক কার্যালয়ে এক সভা ডাকা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy