Advertisement
E-Paper

জলমগ্ন দেড়শো গ্রাম, নিকাশি নিয়ে ক্ষোভও

সকালেই নিকাশির দাবিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন গলসির পুরসা গ্রামের বাসিন্দারা।

ভাতারের মুরাতিপুরে অবরোধ।

ভাতারের মুরাতিপুরে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪১
Share
Save

অগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৪২ মিলিমিটার। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড় বৃষ্টি হয়েছে ২০২.৫ মিলিমিটার। তার সঙ্গে রয়েছে সেচখালে জল ছাড়া। সব মিলিয়ে বুধবার রাত থেকেই জেলার একটা অংশ জলমগ্ন। দুর্ভোগে বহু মানুষ। বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা কেটে জল বার করতে হয়েছে। বেহাল নিকাশি নিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও জেলার আরও তিন জায়গায় পথ অবরোধ করেন এলাকাবাসী। অনেক স্কুল শুক্রবার পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। বর্ধমান-সিউড়ি রোডে ভেদিয়া আন্ডারপাস জলমগ্ন থাকায় ইলামবাজার দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ভুগতে হয় পর্যটকদেরও।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি ব্লকের (কাটোয়া ১, কেতুগ্রাম ২, মঙ্গলকোট, বর্ধমান ১ ও ২, গলসি ১, আউশগ্রাম ২, রায়না ১ ও ২, জামালপুর, মেমারি ২) দেড়শোটি গ্রাম জলমগ্ন। এ ছাড়াও বর্ধমানের ৫টি ও গুসকরার ১০টি ওয়ার্ডে জল জমেছে। ১১৬০টি পরিবার বিপর্যয়ের মুখে। শুক্রবার বিকেল ৩টে পর্যন্ত জেলায় ৪১০টির মতো বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে আর সম্পূর্ণ ভেঙেছে ৭২টি বাড়ি। বেশ কয়েকটি জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “সব দফতরকে নিয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সব মহকুমাতেই ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।” প্রশাসন জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৪টের রিপোর্টে, মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ২৩ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, “বৃষ্টি বাড়তে থাকায় রাত ১১টার সময় ডিভিসি ক্যানেল দিয়ে জল ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতিবৃষ্টির ফলেই জেলার একটা অংশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক রাস্তা কাটতে হয়েছে। পরে সব সংস্কার করা হবে।”

এ দিন সকালেই নিকাশির দাবিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন গলসির পুরসা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করতে গিয়ে নিকাশি নালা বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে, গ্রামের ভিতর ঢুকে পড়ছে দূষিত, নোংরা জল। জল বার করতে পারাজ থেকে শিল্যা যাওয়ার রাস্তা কেটে দিয়েছেন তাঁরা। ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কাটোয়ার আলমপুরের কাছে ফড়ে নদীর জল উপচে ১২০ মিটার লম্বা বৈকুণ্ঠনাথ সেতু ডুবে যায়। কাটোয়া-মালডাঙা রোড নন্দীগ্রামের কাছে জমির জল রাস্তায় চলে আসে। ওই দু’টি রাস্তাতেই এ দিন যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল।

ভাতারের মুরাতিপুরেও নিকাশির দাবিতে অবরোধ হয়। রাস্তাও কেটে দেন এলাকাবাসী। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, “নয়ানজুলি বুজিয়ে ফেলা হয়েছে, সেখানকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।” নিকাশির উন্নতি চেয়ে এসটিকেকে রোডও অবরোধ করেন কালনা ১ ব্লকের নান্দাই বেলতলা এলাকার মানুষ। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েতের বাঘাডাঙা এলাকার বাসিন্দারা জলবন্দী হয়ে পড়েন। অবরোধও হয়। পরে কর্তারা গ্রামে নিকাশি নালা তৈরি করে দেন।

বর্ধমান শহরের সাবজোলা খাল উপচে বাজেপ্রতাপপুর, সাধনপুরের একাংশে রাস্তা ও বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে। বাঁকার জল উপচে সাহাচেতন এলাকা ভাসায়। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। গুসকরা শহরেরে দু’টি ত্রাণ শিবিরে ৩০ জন আশ্রয় নেন। আউশগ্রামে অজয়ের বাঁধে গর্ত দেখা দেওয়ায় সাগরপুতুল গ্রামে আতঙ্ক দেখা দেয়। এসডিও (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “সেচ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”

স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় কাটোয়া শহরের নিকাশির জল অজয় বা ভাগীরথীতে নামতে পারেনি। ফলে শহরের একটা বড় অংশ ডুবে যায়। কাটোয়া হাসপাতালের রাস্তায় গাছ ভেঙে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। কাটোয়া পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর মলয়কান্তি ঘোষ বলেন, সেচ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্লুইস গেটগুলি খোলা হয়েছে। নসরৎপুর পঞ্চায়েতের জালুইডাঙা ও গৌরাঙ্গপাড়ায় বহু বাড়িতে জল ঢুকে যায়। তাঁতশিল্পীরা জানান, জল জমে থাকায় তাঁর যন্ত্রে ক্ষতি হতে পারেব। এসডিও (কালনা) শুভম আগরওয়ালের দাবি, মন্তেশ্বরের জামনায় জলবন্দি ৫০ জনকে উদ্ধার করে স্কুলে রাখা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman Heavy Rainfall

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}