নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ। ফাইল চিত্র
বছর শেষ হতে চলল। সে ভাবে এখনও টানা জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। প্রায় দিনই ঘিরে থাকে ধোঁয়াশার চাদর। এই দূষণের প্রভাব পড়ছে পরিবেশ থেকে শুরু করে মানুষের উপর।
গত ৩০ অক্টোবর কলকাতায় মার্কিন কনস্যুলেটে বসানো বায়ুদূষণ মাপক যন্ত্রে ধরা পড়েছিল বাতাসের বিষের মাত্রা। সে দিন বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার গড় পরিমাণ ছিল ১৫৩। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য থেকে জানা গিয়েছিল, নভেম্বরের প্রায় প্রতি দিনই শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা এ রকমই ছিল। যা বাতাসে ধূলিকণার সহনমাত্রার চেয়ে বেশি। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের নিরিখে বাতাসের দূষণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দূষণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই খাস কলকাতাও। এই শহরের দূষণ নিয়ে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তারা বলছে, প্রবীণ নাগরিকেরা যেমন এর শিকার হচ্ছেন তেমনই শিশুদের ফুসফুস, শ্বাসনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ছে জেলায়ও।
তাই রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে’র নির্দেশ পাওয়ার পরেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিল্পাঞ্চলের দূষণ প্রতিরোধে শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈঠক করল জেলা প্রশাসন। জেলাশাসকের কার্যালয়ে হওয়া বৈঠকে শিল্প পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি দূষণ প্রতিরোধ করতে উদ্যোগপতিদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জেলার বণিক সংগঠনগুলিও। গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে বার্নপুরে ভারতীভবনে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে। ওই দিন শিল্পাঞ্চলের দূষণ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দশ দিয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু কারখানায় দিনের বেলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু রাতে দূষণ নিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না। বিষয়গুলি জেলা প্রশাসনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। বৃহস্পতিবারই জেলার প্রায় ১০ জন উদ্যোগপতিদেরকে নিজের কার্যালয়ে ডেকে বৈঠক করেন জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি। বৈঠকে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী। প্রলয়বাবু বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর রয়েছে কিছু কিছু শিল্প কারখানা দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিয়ম মানছে না। এ দিনের বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে উদ্যোগপতিদের সতর্ক করা হয়েছে।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর এলাকায় কয়েকটি ছোট ইস্পাত ও স্পঞ্জ আয়রণ কারখানা থেকে অতিরিক্ত দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনের কর্তারা জেনেছেন, কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে এলাকা। গাছের পাতা, পুকুর ও কুয়োর জলে ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর ও জামুড়িয়ার ইকড়া, কুলটির কল্যাণেশ্বরী শিল্পতালুক এলাকা থেকে এই বিষয়ে প্রায় দিনই বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন। দূষণ রোধের দাবি জানিয়ে একাধিকবার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন বাসিন্দারা।
দূষণ নিয়ে উদ্বেব প্রকাশ করেছেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকত বসু। তিনি বলেন, ‘‘এই লাগাম ছাড়া দূষণে চামড়ার ক্ষতি হচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।’’ শিল্প-কারখানায় দূষণ নিরোধক যন্ত্র ব্যবহার না হলে শীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন, শহরের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এই সময় কুয়াশার কারণে বাতাস ভারী থাকে। তাই কারখানার ধুলো মিশ্রিত ধোঁয়া কুয়াশা ভেদ করে বেশি উপরে উঠতে পারে না। স্বভাবতই সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হন। ফলে শ্বাসকষ্ট-সহ নানারকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।’’ প্রসঙ্গত, কোটলায় ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা চলাকালীন মাঠের মধ্যেই বমি করতে দেখা যায় শ্রীলঙ্কার পেসার সুরঙ্গা লাকমলকে। দিনভর শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের মুখোশ পরে ফিল্ডিং করতে দেখা যায়। শুধু বোলারের পক্ষে ‘মাস্ক’ পরে বল করা সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ বল করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ে বমি করেছেন দু’দলের দুই বোলার লাকমল ও শামি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, বিকেলের পর থেকে রানিগঞ্জ, কল্যাণেশ্বরী ও জামুড়িয়ার শিল্পতালুক এলাকায় গেলেই দেখা যাবে, কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে গোটা অঞ্চল। বিকেলের পর থেকেই অধিকাংশ শিল্প কারখানায় দূষণ নিরোধক যন্ত্র চালানো হচ্ছে না। আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, উদ্যোগপতিদের স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্দেশিত দূষণ নিরোধক বিষয়গুলি ঠিক ভাবে মেনে চলতে হবে। এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়ে ফেডারেশন অব সাউথবেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘সাধারন মানুষের কথা ভেবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। প্রশাসনের এই নির্দেশ সকলে মেনে চলবেন এই আশা করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy