বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। ফাইল চিত্র
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও তার ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ শাখা অনাময় মিলে তিনশোর কাছাকাছি নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। পাহারায় থাকে সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ। তার পরেও ভরদুপুরে সদ্যোজাতকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান মেডিক্যালে। আশাকর্মী পরিচয় দিয়ে অভিযুক্ত মহিলা যে ভাবে শিশুটির পরিবারকে ‘ভুল বুঝিয়েছেন’ বলে অভিযোগ, তাতে অবাক হাসপাতাল-কর্মী থেকে পুলিশের একাংশ। তাঁদের দাবি, ওই মহিলা হাসপাতালের ‘আটঘাঁট’ জেনেই নেমেছিলেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার গাফিলতি মানতে নারাজ।
সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্ণা-মঞ্চ থেকে ফোনে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “দফতরের কাছ থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু চুরির ঘটনার বিস্তারিত চেয়ে পাঠানো হবে। ওই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হবে।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) দেবাশিস ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বর্ধমান মেডিক্যাল ও অনাময় কর্তৃপক্ষের দাবি, সোমবার রাত পর্যন্ত রিপোর্ট পাঠানোর কোনও নির্দেশ পাননি তাঁরা। তবে অনাময় হাসপাতালের সুপার অমিতাভ সাহা ‘সিসিটিভি ফুটেজ’ দেখার পরে রক্ষীদের কার্যত তুলোধনা করেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাসপাতালের দাবি, ওই মহিলা নিজেকে প্রসূতি দাবি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসার শুরুর কিছুক্ষণ পরে আর চিকিৎসা করাবেন না জানিয়ে ‘রিস্ক বন্ড’ দিয়ে চলে যান। তার পরেই প্রসূতি বিভাগের সিঁড়িতে রায়নার সিপটা গ্রামের দম্পতি সন্দীপ ও রিমা মালিকের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। অভিযোগ, তাঁদের ভুল বুঝিয়েই অনাময়ে নিয়ে যান ওই মহিলা। ওজন করানোর নামে শিশুটিকে কোলে নিয়ে পালিয়েও যান, বলে অভিযোগ।
বর্ধমান মেডিক্যালে এত বড় ঘটনা আগে না ঘটলেও ‘ভুল বোঝানোর’ ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা, টাকাপয়সা লুটের বহু অভিযোগ উঠেছে। শিশু বদলেরও অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েক বার। গত বছর পূর্বস্থলীর মেড়তলার এক দম্পতি, তার আগে ২০১৭ সালে মাধবডিহির লোহাই গ্রামের এক পরিবার, ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর মেমারির তক্তিপুরের এক দম্পতিও শিশু বদলের অভিযোগ করেছিলেন। বেশ কয়েকবছর আগে মাধবডিহির ছোট বৈনান ও তালিতের দুই দম্পতিও শিশু বদলের অভিযোগ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ডিএনএ-পরীক্ষার পরে তাঁরা শিশুটি নিয়ে যান। এ ছাড়া, রোগী বা তাঁর পরিবারের সঙ্গে রক্ষী, চিকিৎসকদের ঝামেলা, ডাক্তারদের নিগ্রহের অভিযোগ ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতেই শ’তিনেক রক্ষী নিয়োগ করা হয়। তার পরেও এই ঘটনায় নিরাপত্তার ফাঁক যে রয়েই গিয়েছে, তা প্রমাণিত বলে মনে করছেন অনেকে।
হাসপাতালের শিক্ষক-অধ্যাপক, জুনিয়র চিকিৎসকদেরই প্রশ্ন, প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা ধৃত মহিলা অনাময় হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় একা একা ঘুরে বেরালেন, অথচ, কেউ তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করল না, এটা কী ভাবে সম্ভব। অমিতাভবাবু বলেন, “অভিযুক্ত মহিলা আমাদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি বেশ কয়েকবার চিকিৎসার জন্যে অনাময়ে গিয়েছিলেন। ফলে, হাসপাতালের অলিগলি তাঁর নখদর্পণে।’’ তবে ‘গাফিলতি’র কথা মানতে চাননি তিনি। তাঁর দাবি, “ওই মহিলাকে দু’জন কর্মী জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। ওই মহিলা সদ্যোজাতের পরিবারকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন বলে জানান তাঁদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy