দুর্গাপুরের রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র
আধুনিক শহর দুর্গাপুর। চওড়া রাস্তাঘাট। মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল, হোটেলে সাজানো এই শহরের রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরছে খাটালের গবাদি পশুর দল। মাঝে-মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। নোংরাও হচ্ছে। দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রবও রয়েছে। অথচ, খাটালগুলির পুনর্বাসন নিয়ে কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই পুরসভার, অভিযোগ শহরবাসীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ডিভিসি মোড়ে খাটাল রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে বেশ কয়েকটি খাটাল চলছে সরকারি জমিতে। শহরের অভিজাত এলাকা সিটি সেন্টার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রাঁচি কলোনি। এখানেও বংশ-পরম্পরায় খাটাল চলছে। খাটাল রয়েছে কাদা রোডে, ডিএসপি টাউনশিপ লাগোয়া বিভিন্ন জবরদখল করা জায়গায়। অভিযোগ, কার্যত শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই এমন বেআইনি খাটালের রমরমাকারবার চলছে।
দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে আচমকা গবাদি পশু চলে আসায় বছরে চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে, জানা গিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশের সূত্রেই। যেমন, ২০১৯ সালে গবাদি পশুর জন্য অন্তত পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে। জখম হন মোট আট জন। মারা যায় একটি গরু ও একটি মোষ। ২০১৮-র জুলাইয়ে এক রাতে জাতীয় সড়কের কাদা রোড মোড় ফ্লাইওভারে গরুর সঙ্গে ধাক্কা লাগে একটি ট্রাকের। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের উপর থেকে ঝুলতে থাকে। নীচে সার্ভিস রোডে সে সময় কোনও যানবাহন গেলে ঝুলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় আরও বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল। এ ছাড়া, ছোটখাটো দুর্ঘটনাও হয়। সম্প্রতি সঞ্জীব সরণিতে মোষের সঙ্গে অটোর ধাক্কায় জখম হন দু’জন যাত্রী।
বাম আমলে এক বার দুর্গাপুর পুরসভা শহরের বাইরে ‘খাটাল কলোনি’ গড়ার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু খাটাল মালিকেরা বেঁকে বসেন। ডিভিসি মোড়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খাটাল ব্যবসায়ী বলেন, “খাটালের অধিকাংশ দুধ স্থানীয় এলাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। শহরের বাইরে আমাদের পাঠানো হলে দুধ বিক্রিতে সমস্যা হবে। রোজগারেটান পড়বে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর জুড়ে গবাদি পশুর বিচরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০১৮-য় খাটাল মালিকদের বৈঠকে ডাকে পুলিশ। পুলিশ জানায়, জাতীয় সড়কে গবাদি পশু দেখলেই বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং খাটাল মালিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। যদিও খাটাল মালিকরা দাবি করেন, দিন-রাত গবাদি পশুকে গোয়ালে বেঁধে রাখলে তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই গবাদি পশু যাতে ফাঁকা জায়গা ছেড়ে রাস্তায় না ওঠে সেদিকে নজর রাখা হবে। এর পরে ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মীরা মাসে গড়ে দু’বার করে খাটালে গিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, তার পরেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০২১-এর অগস্টে অভিযানে নামে ট্র্যাফিক পুলিশ। এক রাতে প্রায় ১০টি গবাদি পশু উদ্ধার করে সরকারি খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়াও মাইকিং করে সতর্ক করা হয় খাটাল মালিকদের। কয়েক দিনের জন্য পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়। যদিও ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিয়মিত অভিযান চালানোর মতো পরিকাঠামো ও লোকবল নেই। খাটাল মালিকরা সচেতন না হলে সমস্যার সমাধান হওয়া মুশকিল।” পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যার মূলে গিয়ে কী পদক্ষেপ করা যায়, সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy