মাউথডিহি খনিতে। নিজস্ব চিত্র
খনিতে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়েছে আসানসোলে ইসিএলের (ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড) সোদপুর এরিয়ার মাউথডিহি কোলিয়ারিতে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই খনির সমস্ত কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিক-কর্মীরা। অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। যদিও বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের সম্ভবনা নেই বলে জানান এরিয়া কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, কয়লা না থাকায় খনিটি বন্ধ করা হচ্ছে।
ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জিএম সৌমেন্দু কুণ্ডু বলেন, ‘‘এখানে মাটির নীচে কয়লা নেই। তাই আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তবে এখানকার শ্রমিক-কর্মীদের কারও কাজ হারানোর আশঙ্কা নেই। তাঁদের সোদপুর বা অন্য এরিয়ার যে কোনও খনিতে স্থানান্তর করা হবে।’’
খনি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে সাড়ে তিনশো শ্রমিক-কর্মী কাজ করেন। এ দিন সকালে শ্রমিক-কর্মীদের একাংশ খনি কার্যালয়ের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান। তাতে লেখা আছে, ভূগর্ভে সঞ্চিত কয়লা শেষ হয়ে যাওয়ায় এই খনির কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। শ্রমিক-কর্মীদের সোদপুর এরিয়া বা অন্য কোনও এরিয়ার খনিতে স্থানান্তর করা হবে। এই বিজ্ঞপ্তি দেখার পরেই কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিক-কর্মীরা। অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে খনি লাগোয়া আশপাশের এলাকাতেও। গোলমালের আশঙ্কায় এলাকায় পৌঁছয় শিল্পনিরাপত্তা বাহিনীও। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ‘‘রাতের অন্ধকারে এই বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার না করা হলে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে না। আরও বড় আন্দোলনে নামব।’’
সরব হয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনও। সিটু নেতা বংশোগোপাল চৌধুরী জানান, শ্রমিক-কর্মীদের অন্ধকারে রেখে এমন বিজ্ঞপ্তি ঝোলানো অন্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘এখনও এই খনিতে প্রায় দেড় লক্ষ টন কয়লা মজুত আছে। তবুও কয়লা শেষ হয়ে গিয়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে খনি বন্ধ করা হচ্ছে।’’ আইএনটিইউসি নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় জানান, বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ আন্দোলন চলবে। বিএমএস নেতা বিনোদ সিংহও বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। এ ভাবে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করা অন্যায়।’’
বছরখানেক আগেই ইসিএলের ষোলোটি খনিকে ‘অলাভজনক’ বলে ঘোষণা করে সেগুলিকে বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সোদপুর এরিয়ার পাটমোহনা, বেজডি, মিঠানি, পারবেলিয়া ও মাউথডিহি খনি রয়েছে। বৃহস্পতিবার মাউথডিহি খনি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। এ দিনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ আসানসোলের মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘শিল্পের পরে, এ বার খনি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হল। আমরাও আন্দোলনে নামব।’’
তবে এই সিদ্ধান্তে অন্যায়ের কিছুই নেই বলে দাবি এরিয়া কর্তৃপক্ষের। সৌমেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘এখন যেটুকু কয়লা মজুত আছে, তা অনেক নীচে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তা তোলা যাবে না। তা ছাড়া, খাদানে জল ঢুকে গিয়েছে। চেষ্টা করেও ওই জল বার করা যাবে না। ফলে, শ্রমিক-কর্মীদের জন্য এই খনি এখন আর নিরাপদ নয়। খনিতে প্রতিদিন গড়ে তিরিশ লক্ষ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষ এই খনির কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy