বাঁ দিকে সমরেশ সরকার, ডান দিকে বিপ্লব পারিয়াদ। নিজস্ব চিত্র।
দু’টি ঘটনার মধ্যে ব্যবধান বছর ছয়েকের। কিন্তু দু’টি হত্যাকাণ্ডেই বহু মিল। ২০১৫ সালে প্রেমিকা সুচেতা চক্রবর্তী এবং তাঁর শিশুকন্যা দীপাঞ্জনাকে খুন করে বাক্সবন্দি অবস্থায় গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন সমরেশ সরকার নামে দুর্গাপুরের এক ব্যাঙ্ককর্মী। আবার কুকুরের বকলস পেঁচিয়ে স্ত্রীকে খুন করে সোমবার থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন ব্যাঙ্ককর্মী বিপ্লব পারিয়াদ। তিনি দুর্গাপুরের মামরাবাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজার। বিপ্লবের মতো সমরেশও ছিলেন মামরাবাজারের ওই ব্যাঙ্কটিরই সহকারী ম্যানেজার।
সোমবার সকালে বাইক চালিয়ে কাঁকসা থানায় যান বিপ্লব। পুলিশকে নিষ্পৃহ গলায় বলেন স্ত্রী ঈপ্সা প্রিয়দর্শিনীকে খুনের কথা। করেন আত্মসমর্পণ। এর পর পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখতে পায় ঈপ্সার দেহ পড়ে রয়েছে মেঝেতে। বিপ্লব এবং ঈপ্সার বাড়ি ওড়িশার কটকে। ২০১৯ সালে বিয়ে হয় তাঁদের। মাস দেড়েক আগে কাঁকসার বামুনাড়ার একটি অভিজাত আবাসনে ফ্ল্যাট কেনেন বিপ্লব। সেখানে থাকতেন স্ত্রীকে নিয়ে। সুন্দরী স্ত্রী, মোটা টাকার চাকরি। তাও কী এমন ঘটল দু’জনের মধ্যে যে এমন একটা ভয়াবহ কাণ্ড ঘটল? এই প্রশ্নই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে বিপ্লব এবং ঈপ্সার প্রতিবেশীদের। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই কি বৈবাহিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল? লতা দেবনাথ নামে তাঁদের এক প্রতিবেশী বলছেন, ‘‘দু’জনের মধ্যে এক দিন অশান্তি হয়েছিল তা শুনেছি। ওঁদের তো বেশি দিন বিয়েও হয়নি।’’ পুলিশও জানতে পেরেছে, গত মাস খানেকের মধ্যে দু’বার অশান্তি হয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর।
ক্যামেরার সামনে বিপ্লব জানিয়েছেন স্ত্রীর নানা চাহিদার কথা। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বিদেশে ঘুরতে নিয়ে যেতে বলেছিল। আমরা মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে আমরা দু’জনে ট্যাটু বানিয়েছিলাম। আমাকে গাড়ি চালানো শেখানোর কথা বলেছিল। আমি তার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স করাতে বলেছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হঠাৎ হঠাৎ নানা বায়না করত। আমি বুঝতে পারতাম না হঠাৎ হঠাৎ ওর মাথায় কী ভূত চাপত। আমিও সাধারণত রান্না করতাম। ও ইচ্ছা হলে করত।’’ সোমবার বিপ্লবের ফ্ল্যাটে ঢুকে কুকুরের বকলসটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিপ্লব জানিয়েছেন, ওই বকলস দিয়েই তিনি ঈপ্সাকে ফাঁস দিয়ে খুন করেছেন।
সোমবার বেলায় বিপ্লবের বিরুদ্ধে কাঁকসা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঈপ্সার বাবা হৃদয়ানন্দ বেহরাও। তাঁর অভিযোগ, ওড়িশায় ফ্ল্যাট কেনার ৩৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন বিপ্লব। তা পেয়েই তিনি ঈপ্সাকে খুন করেছেন বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা বিপ্লবের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy