Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ঐশীর পাশে আছি’, বার্তা পথে, গানে, কবিতায় নাগরিক প্রতিবাদ

রাজনীতির রং না থাকলেও পোস্টার অবশ্য ছিল। সেই পোস্টারের কোনওটাই বড় অক্ষরে লেখা ‘ছিঃ’। কোথাও বা লেখা, ‘ধিক্কার’। সোমবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত এই কর্মসূচিটির আয়োজন করেছিলেন একদল পড়ুয়া।

আসানসোলে প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছবি: পাপন চৌধুরী

আসানসোলে প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪৭
Share: Save:

শীতের বিকেলে সবে শীত জাঁকিয়ে বসছে শিল্পাঞ্চলে। এমন সময়েই কয়েকজন গেয়ে উঠলেন, ‘আমরা শক্তি, আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল।’— এই দলে অবশ্য শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নন, ছিলেন সমাজের নানা অংশের মানুষ। কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানার, পোস্টার ছাড়া এ ভাবেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (‌জেএনইউ) হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানালেন আসানসোলের নাগরিকদের একাংশ।

রাজনীতির রং না থাকলেও পোস্টার অবশ্য ছিল। সেই পোস্টারের কোনওটাই বড় অক্ষরে লেখা ‘ছিঃ’। কোথাও বা লেখা, ‘ধিক্কার’। সোমবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত এই কর্মসূচিটির আয়োজন করেছিলেন একদল পড়ুয়া। তাঁদের দাবি, তাঁরা ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’। দুপুর ৪টে নাগাদ শুরু হওয়া শতাধিক পড়ুয়া, শিল্পী-সাহিত্যিকদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখতে দাঁড়িয়ে পড়েন পথচারীরা।

জনতার দিকে তাকিয়ে এক পড়ুয়া সটান আবৃত্তি করলেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’। ‘জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ,/ আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’।— আবৃত্তি যখন শেষ হচ্ছে সমবেত জনতার গুঞ্জন, সোচ্চার প্রতিবাদের দাবি তখন একটাই, ‘‘জেএনইউ-এর হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই।’’

কেন এই কর্মসূচি? কলেজ পড়ুয়া পারমিতা রায় বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে এমন পরিকল্পিত হামলা কেন? এই দ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই আমাদের আয়োজন।’’ পাশ থেকে পড়ুয়া রেবন্ত কর্মকার বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরে এমন হামলা বন্ধ হোক। হামলা, অশান্তি আমাদের দেশের ঐতিহ্য নয়।’’ এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন জেএনইউ-র ইংরেজি সাহিত্যের গবেষক কস্তুরী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবাদ হলে আক্রমণ তো হবেই। এর ফলে, আগামী দিনে আমাদের প্রতিবাদের জোর বাড়বে।’’ পাশাপাশি, ঐশীর বাড়ি দুর্গাপুর থেকেই তাঁর পড়শি দীপ্তি চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনায় দেশের মহিলা-নিরাপত্তার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

পড়ুয়াদের ডাকে তাঁরাও কেন পথে? এ প্রশ্নে কবি সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, হামলার প্রতিবাদ জানাতেই তাঁদের এখানে আসা। চিকিৎসক, সাহিত্যিক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ঘটনার পরে থেকেই মন ভারাক্রান্ত। বিকশিত হতে চাওয়া পড়ুয়াদের উপর আর কত হামলা দেখব?’’

এ সব কথা বলতে বলতেই জ্বলে ওঠে শহরের পথবাতি। সূর্য অস্তাচলে গেলেও জ্বলে প্রতিবাদের মোমবাতি। প্রতিবাদের গানের রেশ দীর্ঘায়িত হয়, ‘আমরা করব জয়...’। জেএনইউ-এর আক্রান্তদের পাশে থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে ভিড়টা বলে ওঠে, ‘পথে এবার নামো সাথী পথেই হবে পথ চেনা।’— এক নতুন চেনা, নতুন পথ, নতুন মানুষের সন্ধানে এগিয়েচলে ভিড়...।

অন্য বিষয়গুলি:

Civil Movement CAA JNU JNU Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE