সীতারামপুরে স্মরণসভা। নিজস্ব চিত্র
তিনি না থাকলে এখন বেঁচে থাকতেন না, মনে করেন তাঁরা। তাই যত দিন বাঁচবেন, ভুলতে পারবেন না তাঁর কথা— যশবন্ত সিংহ গিলের প্রয়াণের খবর পেয়ে এ কথাই বলছিলেন মুরলী প্রসাদ, যোগেন্দ্র পাসোয়ান, নুর মহম্মদেরা। ১৯৮৯ সালে রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারিতে জল ঢুকে দুর্ঘটনার স্মৃতিতেও ডুব দিচ্ছেন তাঁরা।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, গিল ছিলেন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৮৯ সালের ১১ নভেম্বর গভীর রাতে মহাবীর কোলিয়ারির ভূগর্ভের বড় অংশে জল ঢুকে যায়। আটকে পড়েন ৭১ জন খনিকর্মী। তাঁদের মধ্যে ছ’জনের জলে ডুবে মৃত্যু হয়। খনির উপর থেকে বোরহোল করে ‘ক্যাপসুল’ নামিয়ে প্রায় ৮০ ঘণ্টা পরে বাকি ৬৫ জনকে উপরে তুলে নিয়ে এসেছিলেন গিল। দিন কয়েক আগে অমৃতসরে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। সেই খবর পৌঁছেছে মহাবীর কোলিয়ারি এলাকাতেও।
বছর সাতষট্টির মুরলীবাবু ও ৭১ বছরের যোগেন্দ্রবাবু মহাবীর কোলিয়ারি এলাকার রাজপাড়ায় থাকেন। আশি বছরের নুর মহম্মদ থাকেন মহাবীর কোলিয়ারি কলোনিতে। তাঁরা জানান, খনির উপর থেকে ফোনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জল ঢোকার কথা জানানো হয়েছিল। তার পরে খনির ভিতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মী মাইকের সাহায্যে সবাইকে জানান, কয়লার দেওয়াল ভেঙে গিয়ে খনিতে জল ঢুকে গিয়েছে। সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
যোগেন্দ্রবাবু জানান, সে দিন খনির ভিতরে ২১ ও ৪২ নম্বর সেকশনে কয়লা কাটা হচ্ছিল। ২১ নম্বরে ৬১ জন ও ৪১ নম্বরে দশ জন কর্মী কাজ করছিলেন। এই দু’টি সেকশনের মাঝামাঝি এলাকা দ্রুত জলে ভরে যায়। তাঁরা সবাই একটি উঁচু জায়গায় জড়ো হন। ইতিমধ্যে জলে নেমে খনিমুখের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করতে গিয়ে ছ’জন তলিয়ে যান। ১৩ নভেম্বর বোরহোলের মাধ্যমে নীচে খাবার পাঠানো হয়।
যোগেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘ফোনের সংযোগ ছিল বলে বেঁচেছিলাম। অভয়বাণী পেয়ে মনের জোর ধরে রাখতে পেরেছিলাম আমরা।’’ নুর বলেন, ‘‘খনির উপর থেকে বুদ্ধি করে ২৪ ইঞ্চির বোরহোল তৈরি করে ক্যাপসুল ঢুকিয়ে উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন গিল সাহেব। সেই ভাবে ক্যাপসুলটি তৈরি করেন তিনি। খনিকর্মীদের কাছে তাঁর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’’
তাঁরা জানান, বোরহোলের মাধ্যমে ক্যাপসুলটিতে চেপে নীচে নেমে এসেছিলেন গিল নিজে। পরপর তিন বার তিনি ক্যাপসুলে করে ওঠানামা করেন। এর পরে কর্মীদের অভয় দিনে এক-এক করে উপরে পাঠাতে থাকেন। নিজে নীচেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সবার শেষে তিনি উপরে উঠে আসেন। মুরলীবাবু বলেন, ‘‘তিনি না থাকলে বাঁচতাম না।”
সেই সময়ে এলাকার বিধায়ক ছিলেন বর্তমানে সিটুর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি জানান, ভূগর্ভে জল ঢোকার ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্ধারকাজ পর্যন্ত টানা খনিচত্বরে হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘কর্মীদের উদ্ধারের পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বাঁশরা হাসপাতালে যশবন্ত সিংহ গিল ও অসুস্থ হয়ে ভর্তি থাকা ৬৫ জন খনিকর্মীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি ওঁর প্রশংসাও করেছিলেন।’’ এআইটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলরী সদস্য আরসি সিংহ বলেন, “মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যশবন্ত সিংহ গিল যা করেছিলেন, তা একটি দৃষ্টান্ত।’’
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘পরে ইসিএলের সুরক্ষা দফতরের জেনারেল ম্যানেজার হয়েছিলেন তিনি। তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে বিদেশেও উদ্ধারকাজ হয়েছে।’’ ইসিএল সূত্রে জানা যায়, সীতারামপুরে সংস্থার উদ্ধারকাজ বিভাগের কার্যালয়ে গিলের স্মরণে সভা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy