বিজেপির বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের ‘উস্কানি’তে বহিরাগতেরা বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরে দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বলে প্রকাশ্যে দাবি করছেন বিজেপির নেতারা। যদিও শুক্রবার বিকেলে জেলা থেকে রাজ্য স্তরে পাঠানো রিপোর্টে গোলমালের কারণ দলের ‘অন্তর্দ্বন্দ্বে’ই নিহিত বলে মানা হয়েছে, এমনই দাবি পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি সূত্রের। বৃহস্পতিবার ভাঙচুর, আগুন লাগানোর অভিযোগের ভিত্তিতে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার জামিন পাওয়ার পরে, নিজেদের সঙ্ঘের (আরএসএস) স্বয়ংসেবক বলে দাবি করেছেন তাঁরা। জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী ছাড়া, দলের সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্ত, সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি প্রবাল রায়, মণ্ডল সভাপতি (৩০ নম্বর) সাগ্নিক শিকদার-সহ ছ’জনের নামে পাল্টা
জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছেন তাঁরা। বর্ধমান থানার দাবি, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য নেতৃত্ব রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে। প্রাথমিক রিপোর্টে কারও নামে সরাসরি অভিযোগ না করা হলেও দু’পক্ষকেই ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হয়েছে। গাড়ি করে লোক নিয়ে এসে দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালানোর নিন্দা করা হয়েছে। ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর পিছনে কারা রয়েছে, কারা টাকা ঢেলেছে—তার খোঁজ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্য কমিটির কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধননিয়া ও সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীও এ দিন বিকেলে পৃথক রিপোর্ট রাজ্যে জমা দিয়েছেন। সন্দীপ নন্দী বলেন, “তিনটে পর্যায়ে তদন্ত চলছে। রিপোর্ট জমা পড়ার পরে, রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন। দলবিরোধী কাজ কেউ করলে, রেয়াত করা হবে না।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা কার্যালয়ে হামলা চালানো ও ভাঙচুরের ঘটনায় ‘অজ্ঞাতপরিচয়’দের নামে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী। রাত সওয়া ৯টা নাগাদ লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, অপরিচিত দুষ্কৃতীরা বিনা প্ররোচনায় কার্যালয়ের কাচ, ফুলের টব-সহ অন্য সম্পত্তি ভাঙচুর চালিয়েছে। লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে মূল দরজা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা দফতরের বাইরে থাকা দু’টি পিক-আপ ভ্যানে আগুন লাগিয়েছে, তাঁদের ছোড়া ইটের ঘায়ে কয়েকজন দলীয় কর্মী জখম হয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ধমান থানা ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর নেতা আউশগ্রামের স্মৃতিকান্ত মণ্ডল, শক্তিগড়ের লক্ষীকান্ত দাস, গলসির নন্দন সিংহ-সহ সাত জনকে গ্রেফতারও করে। শুক্রবার আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা সঙ্ঘের লোক। সিপিএম-তৃণমূল যা করেনি, সন্দীপ নন্দী তা করেছেন। বিজেপির থেকে এটা কাম্য নয়।’’ তাঁদের দাবি, তাঁরা চার জন দলীয় দফতরে রাজ্য পর্যবেক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের মারধর করে, একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। তার পরে দলীয় কার্যালয়ের ছাদ থেকে ইট ছোড়া হয়। যে গাড়িতে করে কর্মী-সমর্থকেরা এসেছিলেন, তাতে আগুন ধরানো হয়।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পরে কাঞ্চননগর, উদয়পল্লি, কালনা গেট, মেমারির রসুলপুর- সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘বিক্ষুদ্ধ’দের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের বেশির ভাগই আরএসএস কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। রসুলপুরের ঘটনায় শুক্রবার বিষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ মজুমদার, বিপ্লব বিশ্বাস ও কানাইলাল সরকারকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। আহত মিলন বিশ্বাস অনাময় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর দাদা বিপুল বিশ্বাসের অভিযোগ, বিজেপির লোকেরাই ঊৃভাইকে টেনে নিয়ে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ের কাছে মারধর করেছে। বৃহস্পতিবারও যাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁরা সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক বলেই নিজেদের দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, সঙ্ঘ বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। সমম্বয় বৈঠকে বিজেপির সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও মনে করা হয়েছে। সঙ্ঘের এক স্বয়ংসেবক, পেশায় আইনজীবী আশিস পাল যদিও বলেন, ‘‘সব সংসারেই খুচখাচ অশান্তি হয়। সব কিছুকে ছাপিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, দল বড় হচ্ছে, অন্য দল থেকে অনেকে আসছেন। তা নিয়ে দলের অনেকের অন্য মত থাকতেই পারে। তবে তা জানানোর নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। যাঁরা বিশৃঙ্খলা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা কমিটি ব্যবস্থা নেবে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল কতটা ‘ব্যবস্থা’ নেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দলেই। রাজ্যের এক শীর্ষ নেতার দাবি, “প্রাথমিক রিপোর্টে দলের ‘দ্বন্দ্ব’কে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। অন্য সময় হলে, রাতারাতি সাসপেন্ড করা হত। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে হচ্ছে, ব্যালেন্স করে চলতে হচ্ছে।’’ যদিও দলীয় দফতরে যাঁরা হামলা চালিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, এ রকম গোলমাল দাবানলের মত জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়বে, বলেও আশঙ্কা করেছেন দলেরই আর এক অংশ।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো, বিভিন্ন কার্যকর্তা, কর্মীদের কাছে থাকা ভিডিয়ো ফুটেজ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের ছবিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন। তার পরেই বিকেলে রিপোর্ট পাঠানো হয়। যদিও ওই প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের উস্কানিতে অপরিচিত, বহিরাগতেরা আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার ‘রোড-শো’ সফল হয়েছে। সেই হিংসায় তৃণমূলের এক নেতার উপস্থিতিতে অরাজনৈতিক ঘৃণ্য কাজ করা হয়েছে।’’ তবে তৃণমূলের কোন নেতাকে ঘটনার সময় দেখা গিয়েছে, তা খোলসা করেননি তিনি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ আগেই দাবি করেছেন, পুরোটাই বিজেপির কোন্দল। তৃণমূলের কোনও যোগ নেই ঘটনার সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy