প্রতীকী ছবি।
শিশু-মৃত্যু কমেছে। কিন্তু প্রসূতির মৃত্যু বেড়েছে। লকডাউনের সময়ের সঙ্গে গত বছরের তুলনায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সে রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নেও। তুলনামূলক ভাবে প্রসবের সংখ্যা কমলেও প্রসূতি মৃত্যু বাড়ল কেন, উঠেছে সে প্রশ্ন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১,৬৫০টি প্রসব হয়। সেই হিসেবে, এপ্রিল থেকে জুলাই, এই চার মাসে মোট প্রায় সাড়ে ছ’হাজার প্রসব হওয়ার কথা। কিন্তু তার থেকে প্রায় ৯০০ কম প্রসব হয়েছে। কিন্তু গত বছর ওই চার মাসে যেখানে দশ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে এ বার ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় গত বছর এই সময়ে প্রসূতি-মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪। এ বার তা দাঁড়িয়েছে ১৮। গত বছর ওই চার মাসে কালনা ও কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে যথাক্রমে এক জন ও দু’জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। এ বার কালনায় এক জন ও কাটোয়ায় কোনও প্রসূতির মৃত্যু হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এক জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার অন্য কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
প্রসূতির মৃত্যু তুলনায় বাড়লেও শিশু-মৃত্যুর হার অনেকটাই কম বলে প্রশাসনিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। গত বছর ওই সময়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৪৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যা ৩২৮। পুরো জেলার হিসেবে, গত বছর এপ্রিল থেকে জুলাই ৫৫২ জন শিশুর মৃত্যু হয়। এ বছর সেই সংখ্যা ৪০৫। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অশোক দত্তের দাবি, ‘‘রাজ্যের গড়ের তুলনায় আমাদের হাসপাতালের শিশু-মৃত্যুর হার অর্ধেক। ‘পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এ (পিকু) এক জন শিশুও মারা যায়নি। সে কারণে লকডাউনের মধ্যে এমস থেকে আসা পরিদর্শক দল এসে আমাদের বিভাগের প্রশংসা করেছে।’’
কয়েকবছর আগে এই হাসপাতালে এক দিনে ১২ জন শিশুর মৃত্যু নিয়ে হইচই হয়েছিল। মাঝেমধ্যে ভুল চিকিৎসায় শিশু-মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। আবার কয়েকবার শিশু বদলের অভিযোগ উঠেছে।
এ বার এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা কমানো গেল কী ভাবে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও চার-পাঁচটি জেলা থেকে শিশুদের চিকিৎসার জন্য এখানে আনা হয়। শিশু বিভাগের সামনে হাঁটাচলা করাও মুশকিল হয়। এক-এক সময়ে সাধারণ শয্যায় দু’তিন জন করে শিশুকে রাখতে হয়। ‘পিকু’ বা ‘নিকু’ বিভাগেও শয্যার তুলনায় বেশি শিশু থাকে। লকডাউন ও তার পরবর্তী সময়ে সেই রোগীর চাপ অনেকটাই কম। ওই বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কৌস্তভ নায়েকের কথায়, “ভিড় কম রয়েছে। চিকিৎসক-নার্সেরা হাসপাতালেই রয়েছেন। শিশুদের প্রতি পূর্ণমাত্রায় নজরদারি করা যাচ্ছে। তাই শিশু-মৃত্যুও কমে গিয়েছে।’’
কালনা মহকুমা হাসপাতালে গত বছরের চেয়ে এ বছর এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা এক কমেছে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে গত বছরের তুলনায় সেই সংখ্যা অর্ধেক হয়েছে। সিএমওএইচ প্রণব রায়ের বক্তব্য, “করোনা-আবহাওয়ায় মহকুমা হাসপাতালগুলি সমস্যার মধ্যে পড়েছিল। কম চিকিৎসক-নার্স নিয়ে কাজ করতে হচ্ছিল। তার মধ্যেও শিশু ও মায়েদের প্রতি চিকিৎসকদের নজর ভাল ছিল বলেই কঠিন পরিস্থিতিতেও মৃত্যুর হার কমানো গিয়েছে।’’
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি-মৃত্যুর সংখ্যাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “বছরের হিসেবে দেখা গেলে, ফি বছর প্রসূতি-মৃত্যু কমছে। কোভিড শুরুর দিকে কম চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। প্রতিটি মৃত্যু নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য ভবনে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy