Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Railway Cargo Corridor

ভোল বদলাবে অন্ডাল, আশা শিল্প মহলের

অন্ডাল ও লাগোয়া এলাকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এখনও পণ্য পরিবহণের জন্য অনেকটাই সড়কপথের উপরে নির্ভর করতে হয়।

প্রস্তাবিত ফ্রেট করিডর।

প্রস্তাবিত ফ্রেট করিডর। ছবি: পাপন চৌধুরী।

সুশান্ত বণিক ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ০৯:০৩
Share: Save:

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল

বিহারের শোননগর থেকে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল পর্যন্ত ৩৭৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পূর্ব পণ্যবাহী করিডর তৈরি করার কথা জানিয়েছে রেল মন্ত্রক। এর ফলে, শিল্প-মহলের দাবি, ভোল বদলানোর সম্ভাবনা রয়েছে অন্ডাল তথা পশ্চিম বর্ধমানের অর্থনীতির। মূলত তিন সূত্রে এমনটা ঘটতে পারে বলে আশা শিল্পোদ্যোগীদের বড় অংশেরই।

বণিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, অন্ডাল-সহ পশ্চিম বর্ধমান তো বটেই দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি-সহ অন্তত সাতটি জেলার ব্যবসায়ীরা এই করিডরের ফলে উপকৃত হতে পারেন। এর প্রধান কারণ, প্রথমত, পণ্য পরিবহণের ভাড়া কমবে। বাড়বে পণ্য পরিবহণের গতিও। আর এই ব্যবস্থাটির প্রধান কেন্দ্র হবে অন্ডাল তথা পশ্চিম বর্ধমান। এই অঞ্চল থেকে ইস্পাত, সিমেন্ট, কয়লা ইত্যাদি রফতানি করা হয় উত্তর-পূর্ব ভারতে। পাশাপাশি, ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আরকরিক লোহা, ক্লিঙ্কার, সর্ষে, নুন, চিনি-সহ নানা কিছু আমদানি করা হয় রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি রাজ্যগুলি থেকে।

অন্ডাল ও লাগোয়া এলাকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এখনও পণ্য পরিবহণের জন্য অনেকটাই সড়কপথের উপরে নির্ভর করতে হয়। করিডর হয়ে গেলে, প্রায় পুরোটাই রেলপথ এবং কিছুটা সড়কপথ ব্যবহার করা যাবে। রেলে পণ্য পরিবহণের ভাড়া সড়কের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। পাশাপাশি, পণ্য পরিবহণের গতিও বেশি। এই পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদনের খরচ অনেকটাই কমবে। বিষয়টি জানা যাচ্ছে বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুশান্ত সানিগ্রাহীর কথাতেও। তিনি জানাচ্ছেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাঁরা রেলপথে কয়লা নিয়ে আসেন। কিন্তু পাণ্ডবেশ্বর লাগোয়া এলাকা থেকে সড়কপথে কয়লা আনতে হয়। করিডর তৈরি হলে কয়লা নিয়ে আসার জন্য রেলপথই ব্যবহার করা যাবে।

দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত নিউ অন্ডাল জংশনকে কেন্দ্র করে জিনিসপত্র ওঠানো-নামানোর কাজে প্রচুর সংখ্যক কর্মীর দরকার পড়বে। এর ফলে, অন্ডাল-সহ জেলার বেকার সমস্যা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। সে সঙ্গে, অনুসারী ক্ষেত্রে আয়ের সুযোগও তৈরি হবে বলে আশা।

তৃতীয়ত, সুফল পেতে পারে অন্ডালের চাষাবাদও। অন্ডাল ব্লক কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, অন্ডাল ব্লকে দু’হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদিত হয়। ৭০০ একর জমি দু’ফসলি। পাঁচশো হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়। রেলপথে পণ্যবাহী করিডর হলে ভবিষ্যতে জেলার কৃষকেরা লাভবান হবেন। কারণ, এক দিকে যেমন কম দামে চাষাবাদের জরুরি সামগ্রী পেতে পারেন তাঁরা। তেমনই, বাড়বে কৃষি-পণ্য রফতানির সুযোগও।

পাশাপাশি, উখড়া চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মনোজ সরাফ জানাচ্ছেন, ‘অমৃত স্টেশন’ প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা খরচে অন্ডাল স্টেশনে আধুনিক করা হবে। কাছেই রয়েছে বিমানবন্দর, জাতীয় সড়ক। প্রায় প্রতিটি কোলিয়ারি থেকে রেল সাইডিংয়ের মাধ্যমে কয়লা নিয়ে আসার ব্যবস্থাও রয়েছে। মনোজের দাবি, “করিডর হলে, এই যোগাযোগ ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে বড় শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে, খুচরো বিক্রেতারাও লাভবান হবেন।” ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর স্মল স্কেল ইন্ড্রাস্টিজ়ের’ সহ-সভাপতি সন্দীপ ভালোটিয়া, সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানেরাও প্রস্তাবিত করিডরটির ফলে পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পে সুদিনের আশা করছেন।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রও শুক্রবার বলেন, “পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন থেকেই পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে সব থেকে বেশি আয় হয়। এই ডিভিশনের অন্তর্গত অন্ডালের এমনিতেই পণ্য পরিবহণে গুরুত্ব অপরিসীম। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় অন্ডালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে করিডর-স্টেশন হলে, রেলের আয় এই ডিভিশন থেকে আরও বাড়বে বলে আমরা
মনে করছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Andal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy