আসানসোলে রেলের সেই হাসপাতাল ভবন। নিজস্ব চিত্র
অনেকটা পিকাডিলির আর্ল অব বার্লিংটনের সুবিশাল প্রসাদের এক টুকরো প্রতিরূপ। প্যালাডিয়ান স্থাপত্যে তৈরি লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারের প্রাসাদের সঙ্গে নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে আসানসোলে এক সময়ের রেল হাসপাতাল বার্লিংটন হাউসের।
প্রায় জীর্ণ হতে বসা প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো সেই বাড়ি সম্প্রতি সংরক্ষণ করে আগের চেহারা ফিরিয়ে দিয়েছে রেল। লাল ইঁটে তৈরি দেওয়াল, দ্বিস্তরীয় পুরু থাম এবং প্রতিসাম্য এই নির্মাণশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেওয়াল থেকে বারান্দা কিংবা খিলান সব কিছুই আয়তাকার, বর্গাকার বা ত্রিভুজাকৃতি। সাম্যই এই নির্মাণশৈলীর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
১৮৬৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের তৈরি এই ভবনে সেই সময় রেলের হাসপাতাল ছিল। ৭৪৮ বর্গমিটারের এই ভবনে ১২টি বড় মাপের কক্ষ, একটি সেন্ট্রাল হল এবং একটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে এখানে পাঠানো হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ সেনাদের চিকিৎসার প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হয়েছে এই হাসপাতাল। কমবেশি প্রায় ৯৭ বছর ধরে হাসপাতাল চলার পরে ১৯৬৬ সালে এই ভবন থেকে হাসপাতাল অনত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে দীর্ঘদিন ভবনটি রেলের হাসপাতালের নার্সদের থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে আগাছায় ভরে গিয়েছিল ভবন এবং সংলগ্ন এলাকা।
গত কয়েক বছর ধরে আসানসোলে পূর্ব রেলের তরফে ঐতিহ্য সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ৩৭টি ভবন সংরক্ষণ করা হয়েছে। আসানসোলের ডিআরএম প্রশান্তকুমার মিশ্রের উদ্যোগে এই কাজ করা হয়েছে। রেলবোর্ডের তরফেও ওই কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। রেলের ঐতিহ্যবাহী ভবন সংস্কারের সঙ্গে জড়িত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দেশের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে রেল। আসানসোলে সেই ইতিহাসের অনেক অবশেষই রয়েছে, যা সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি।’’
প্রায় ধ্বংস হতে বসা ভবনের মেরামত করতে গিয়ে রেলের আধিকারিকদের বিশেষ সতর্কতা নিতে হয়েছে। জল নিকাশির বাঁকানো টালি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহারোপযোগী করা, জীর্ণ ভবনের ছাদ মেরামত করতে হয়েছে। সে জন্য বিশেষ জল নিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে। এক সময় শহরের ‘ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে পরিচিত বাড়িটিকে সাজিয়ে তুলতে লাগোয়া জায়গায় বাগানও তৈরি করেছে রেল। এ ছাড়া বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহারের ব্যবস্থাও যোগ করা হয়েছে।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে রেল। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই সংরক্ষণ করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy