দিঘির চারপাশ দিয়ে এভাবেই হয়েছে বেআইনি নির্মাণ। নতুনগঞ্জে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে প্রজাদের তেষ্টা মেটাতে দিঘিটি খনন করিয়েছিল বর্ধমান রাজ পরিবার। সেই দিঘির অস্তিত্বই এখন সঙ্কটে।
বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নতুনগঞ্জের ওই দিঘি প্রতিদিন একটু একটু করে বুজিয়ে বহুতল গড়ার ছক কষেছে মাফিয়ারা। পুরসভাও জলাশয় বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করার অনুমতি দিচ্ছে। এই অভিযোগ তুলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছে ‘বর্ধমান পুর নাগরিক কল্যাণ কমিটি’। তাতেও লাভ না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি দিয়ে ওই ঐতিহাসিক জলাশয় বাঁচানোর দাবি করেছে ওই কমিটি ও নতুনগঞ্জের বাসিন্দারা। গত ২০ মে অভিষেকবাবু বর্ধমানের জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধও করেছেন।
বর্ধমান পুর নাগরিক কল্যাণ কমিটির দাবি, আনুমানিক সাত একর জায়গা জুড়ে ওই দিঘিটি খনন করিয়েছিল বর্ধমান রাজ পরিবার। দিঘির উপর দিয়ে ব্রিটিশ আমলে সেতুও তৈরি হয়েছিল, যা দিঘির পুল নামে পরিচিত। পরে রাজ পরিবার দিঘিটি তাঁদের নিকট আত্মীয় বনবিহারী কাপুরকে তৎকালীন ৩৭ টাকায় পুজো চালানোর জন্য লিজ দেয়। বর্ধমান শহরের বোরহাট থেকে বাঁকা নদীর ধার পর্যন্ত এই দিঘিটি সিএস রেকর্ড অনুযায়ী, ৬০০ মিটার লম্বা ও ১৫০ মিটার চওড়া। কিন্তু এখন বুজতে বুজতে দিঘিটি সাড়ে তিন একরের মতো এসে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। বর্ধমান নাগরিক কল্যাণ কমিটির সদস্য তথা টিএমসিপি-র জেলার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, “জলাশয়টি কার্যত মজে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার মধ্যেই প্রতিদিন প্রকাশ্যে জলাশয়টি বোজাচ্ছে মাফিয়ারা। যে ভাবে বহুতল গড়ার ছক চলছে, তাতে আর কিছু দিনের মধ্যে জলাশয় বলে কিছু থাকবে না।” ঐতিহাসিক দিঘিটিকে বাঁচাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছিলেন। দিঘির চারদিকে ফ্লেক্স লাগিয়ে প্রচারও করা হয়েছে যে, দিঘি, পুকুর ও পুকুর পাড় বেআইনি ভাবে বিক্রি করার চক্রান্ত চলছে- সাবধান ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু তারপরেও একশ্রেণির লোক দিঘিটি বুজিয়ে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
বর্ধমানের শহরের ইতিহাস বিশেষজ্ঞদেরও দাবি, নতুনগঞ্জে এই দিঘিটি যে বর্ধমানের রাজারা খনন করেছিলেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ বিভিন্ন নথিতে দেখা গিয়েছে, দেবতার পুজোর জন্য কিংবা অন্য কারণে পুকুর ‘লিজ’ দিচ্ছেন রাজ পরিবারের সদস্যেরা। ‘বর্ধমান রাজ ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থের ২ নম্বর পাতায় নীরদবরণ সরকার ‘আবু রায়’ শীর্ষক লেখায় জানিয়েছেন, ‘সেই সময় নূতনগঞ্জ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ হত ‘দিঘিরপুল’ অঞ্চলের বিশাল দিঘি থেকে। এই দিঘি এখন মজে যাচ্ছে।’ আর এক ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশও বলেন, “শহরের বাসিন্দাদের জল সরবরাহের জন্যই ওই দিঘি খনন করেছিল রাজ পরিবার।”
বর্ধমান পৌর নাগরিক কল্যাণ কমিটির সম্পাদক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঐতিহাসিক এই দিঘিটি রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। প্রশাসনের সর্বস্তরে যেমন চিঠি দিয়েছি, তেমনি অভিষেকবাবুকেও জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, পুরসভা এই দিঘিকে রক্ষা করার বদলে দিঘি বুজিয়ে বাড়ি করার জন্য অনুমতি দিচ্ছে।” তবে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলর (আবাসন) অরূপ দাসের দাবি, ‘‘কোথাও বেআইনি বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়নি। দিঘি বুজিয়ে কেউ বাড়ি করলে প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া জলাশয় বোজানোর বিষয়টি মৎস্য দফতর দেখে।” আর মৎস্য দফতরের বর্ধমানের অন্যতম অধিকর্তা দেবাশিস পালুই বলেন, “আমরা আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy