বাঁ দিকে, ধৃত আভাস। ডান দিকে, তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল। নিজস্ব চিত্র
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বেই বর্ধমানের কার্জন গেট চত্বরে হামলা হয়েছে বলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বর্ধমান থানায় মামলা রুজু করলেন আইসি সুখময় চক্রবর্তী। তৃণমূলের তরফেও মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে সিপিএমের প্রায় দু’হাজার কর্মী-সমর্থক বুধবার বিকেলে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সরাসরি ১১৯ জনের নাম দিয়ে অভিযোগ করেছেন বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলর নুরুল আলম। পুলিশ অবশ্য ৫৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। যার মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান এসএফআইয়ের সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী-সহ ৪৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তৃণমূল কাউন্সিলরের অভিযোগে ধৃতদের ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ করার জন্য তদন্তকারী অফিসার আদালতে আবেদন করলে আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানান। ধৃতের আইনজীবীরা একই ঘটনায় দু’টি এফআইআর কেন হবে, সে প্রশ্নও তোলেন। ধৃতের আইনজীবী অমল দত্ত বলেন, ‘‘বিচারক মূল পুলিশের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ৩১ জনকে একই ঘটনার উপরে আর একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’’
বুধবার বিকেলে সিপিএমের আইন-অমান্য আন্দোলনকে ঘিরে বর্ধমান শহরের কার্জন গেট কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। পুলিশের দাবি, গোলমাল পাকানোর উদ্দেশে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ পিঠ-ব্যাগে করে ইট-পাথর নিয়ে এসেছিলেন। প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করার সময় ইট-পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। জিটি রোডের ধারে পড়ে থাকা ইটও সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা ছুড়তে থাকেন বলে অভিযোগ। তাতে ২২ জন পুলিশ কর্মী জখম হন। পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে জলকামান, ১২ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো হয়। তখনও ইট ছোঁড়া বন্ধ না হওয়ায় এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর আটকাতে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করতে হয় বলে পুলিশের দাবি। তৃণমূলের কাউন্সিলরের অভিযোগ, ‘বিধায়ক সহায়তা ভবনের’ ভিতরেও ভাঙচুর ও সেখানকার ছয় কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। অফিস থেকে কার্জন গেটের পাশে ফলের দোকানেও সিপিএমের দুষ্কৃতীরা লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ।
বুধবার রাতে মহম্মদ সেলিম দাবি করেছিলেন, ‘‘পুলিশের গাড়ি পুলিশ নিজেই ভেঙেছে! আর তৃণমূলের তো অনেক গোষ্ঠী। কোনও গোষ্ঠী ওই সব কাণ্ড ঘটাতে পারে।’’ এ রকম চলতে থাকলে থানায় থানায় বিক্ষোভ হবে বলেও দাবি করেন তিনি। এ দিন থানা থেকে বর্ধমান আদালতে যাওয়ার পথে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা কেউ বালি বা গরু চুরি করে ধরা পড়িনি। মানুষের পক্ষে লড়াইয়ের ময়দান থেকে আমাদের তুলে আনা হয়েছে। সরকার-বিরোধী লড়াইকে ওরা ভয় পাচ্ছে।’’
এ দিন বিকেলে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কার্জন গেট চত্বর ঘুরে দেখেন। কার্যত হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘‘শীতের সময় সাপ গর্তে থাকে। গরমে বাইরে বার হলে মানুষ বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নেয়। কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ায়। তোমরা এখানে গুণ্ডামি করবে, অশান্তি করবে, আর সব সময় তোমাদের ছেড়ে দেবে!’’ বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাসও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘বর্ধমান শহরে সিপিএমের তাণ্ডব রুখতে আমাদের পাঁচ মিনিট লাগবে। ঘটনার পরেই সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালাতে চেয়েছিল দলের কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু নেতৃত্বের নির্দেশে আমরা কোথাও কিছু করিনি। গণতান্ত্রিক ভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আগামী দিনে সিপিএম এরকম করলে আমরাও বুঝিয়ে দেব তাণ্ডব কাকে বলে।’’
এ দিনই অবশ্য বর্ধমানের দেওয়ানদিঘির আঞ্চলিক কার্যালয়ে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসন যদি দলদাস হয়ে পড়ে, তার চেয়ের লজ্জার কিছু হয় না। এর ফল তৃণমূলকে ভোগ করতেই হবে।’’ সিপিএমের নেত্রী পৃথা তায়ের দাবি, ‘‘এই ভাবে আমাদের লড়াই-আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারবে না তৃণমূল।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪৬ জন ধৃতকে এ দিন বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন জামিন পান। সাত জনকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। বাকি ৩৪ জনকে জেল-হেফাজতেপাঠানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy